জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক কলেজ পরিদর্শক আমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বিথীকা শিকদারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার তদন্ত শেষে দুদক যশোর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোশাররফ হোসেন আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপপরিচালক আল আমিন।
অভিযুক্ত অমল কুমার বিশ্বাস বর্তমানে যশোর সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন এবং তার স্ত্রী বিথীকা শিকদার গৃহিনী। বিথীকা শিকদার মাগুরার শালিখার সংসদ সদস্য ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের আপন বোন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, অমল কুমার বিশ্বাস ১৪তম বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে ১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে সরকারি সিটি কলেজে যোগদান করেন। বিভিন্ন কলেজে চাকরি করে ২০০৯ সালের ২২ মার্চ যশোর শিক্ষাবোর্ডে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে যোগ দেন। পরে ২০১০ সালের ১৭ জুন শিক্ষাবোর্ডে কলেজ পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তিনি যশোর সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদে কর্মরত আছেন।
শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত থাকা অবস্থায় অমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অজর্নের অভিযোগ ওঠে। এরপর অমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বিথীকা শিকদারের সম্পদ বিবরণী চেয়ে দুদক নোটিশ দেয়। সে অনুযায়ী তারা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। বিবরণীতে অমল কুমার বিশ্বাস ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবর ও ২১ লাখ ৭০ হাজার ৪১৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৪১৪ টাকার সম্পদ এবং তার স্ত্রী বিথীকা শিকদার ৪ লাখ টাকার স্থাবর ও এক কোটি ৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৩০ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৪৫ হাজার ২৩০ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। অর্থাৎ দু’জনে দুদকে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৪৪ টাকার সম্পদের হিসাব জমা দেন।
অমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রীর দেয়া সম্পদের প্রাথমিক তদন্ত শেষে ব্যাপক গড়মিল খুজে পায় দুদক। এ ঘটনায় ২০১৯ সালে দুদক বাদী হয়ে মামলা করে। মামলার তদন্ত শেষে অমল কুমারের ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবর ও ৫৪ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৭ টাকার সম্পদ এবং স্ত্রী বিথীকা শিকদারের নামে উক্ত পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যায়। আসামিদ্বয়ের মোট প্রাপ্ত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২১ লাখ ২ হাজার ৬৮৭ টাকা। সে মোতাবেক তারা দুদকে ৩২ লাখ ৪১ হাজার ৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া, এর বিপরীতে পারিবারিক খরচ, চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া খরচ বাদে উভয়ের বৈধ নিট আয় পাওয়া গিয়েছে ৭৬ লাখ ২২ হাজার ৪০২ টাকা। এ অনুযায়ী আসামিদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ টাকা।
এ মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১), মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারা দন্ডবিধি ১০৯ ধারায় আসামিদের অভিযুক্ত করে রোববার আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চার্জশিটে অভিযুক্ত দু’জন জামিনে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি