যশোর পৌর কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে-আর জিম্মিতে নয়, হরিজনদের কোনো অনৈতিক দাবি মেনে নেয়া হবে না। এখন থেকে তাদের ব্যবহৃত কোনো বিদ্যুৎ বিলের দায় পৌরসভা নেবে না। তাদেরকে টাকা দিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে।
পৌর মেয়র আল্টিমেটাম দিয়েছেন আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে হরিজনরা কজে যোগ না দিলে বিকল্প লোক নিযুক্ত করে কাজ করানো হবে। প্রশাসনকে সাথে নিয়ে পৌরসভার লোকজনও মাঠে থাকবে। এভাবেই শহরের পরিবেশ সুন্দর রাখা হবে।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে যশোর রেলরোড হরিজন পল্লীর শতাধিক পরিবার টানা ৪ দিন অন্ধকারে থাকার ঘটনায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ৮টি হরিজন পল্লীর সদস্যরা। তারা দ্রুত সংযোগ দেয়ার দাবিতে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। এ কারণে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ময়লার স্তুপ জমে গেছে। স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীরা মুখ চেপে চলাচল করছেন। আগামি ১২ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে আরো কঠিন কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে পৌর মেয়রকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা। আর ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষের দাবি, বকেয়া পরিশোধ করলেই সংযোগ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে পৌর মেয়রকে বিল পরিশোধ করতে নোটিশ করা হলেও এখন আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর মেলেনি।
যশোর পৌরসভার নামে থাকা ৩টি মিটারে ৩টি হরিজন পল্লীতে বকেয়া ৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বছরের পর বছর নোটিশ করে আসছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। এরই প্রেক্ষিতে চলতি মাস থেকে যশোর পৌর কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন এখন থেকে হরিজনদের বিদ্যুৎ বিলের দায় আর নেবেনা পৌরসভা। এরই অংশ হিসেবে ২৯ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকটি টিম ৩টি হরিজন পল্লীতে গিয়ে মিটার বসানোর চেষ্টা করেন। হরিজন সম্প্রদায়ে লোকজন যাতে আগে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনে ব্যবহার করেন সে লক্ষ্যে নেয়া উদ্যোগ ওইদিন কার্যকর হয়নি বাঁধার মুখে। হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা বিদ্যুৎ বিভাগের অভিযানিক অফিসারদের পরিস্কার জানিয়ে দেন ৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হলে পৌরসভা দেবে। এর ক’দিন পরেই ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হঠাৎ রেলরোডের হরিজন পল্লী বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। আর সেই থেকে টানা ৪ দিন বিদ্যুৎ বিছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছে হরিজন পল্লীর শতাধিক বাসিন্দা।
বিদ্যুৎ বিছিন্নের প্রতিবাদে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছের হরিজনেরা। তারা গত ৩ দিন যাবৎ পৌরসভা এলাকায় কর্মবিরতি পালনসহ ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা কাজ বন্ধ রাখার কারণে শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তুপ জমা হয়েছে। এতে পথচারী, শহরে আসা লোকজন পৌরবাসী ও শিক্ষার্থীদের মুখে কাপড় দিয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। শহরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মোড়েই ময়লার স্তুপ জমা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা না নিয়ে যাওয়ায় পশু-পাখিতে এসব ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ ইস্যুতে কাজ বন্ধ করে মাঠে নামা হরিজনেরা ৭ ফেব্রুয়ারি শহরে ঝাড়– মিছিল করে। তারা প্রেসক্লাব যশোরে সামনে অবস্থান নিয়ে পৌর মেয়রের বিষদগার করে বক্তব্য দেন। আগামি ১২ ঘণ্টার মধ্যে যশোর পৌরসভার রেলরোড হরিজন কলোনীর বিদ্যুৎ লাইন সচল না করলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ার দিয়েছেন হরিজন নেতারা।
যশোর পৌরসভা শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে একাট্টা হন ৮টি হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা। রেলস্টেশন হেলা সমাজ ও বাজার হরিজন কলোনী, মনিহার তালতলা কলোনী, পুরোনো পৌরসভা কলোনী ও ধর্মতলা কলোনীর তিন শতাধিক হরিজন দুই ঘণ্টা ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদেরকে ১২ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ না দিলে যশোর পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পৌর মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ তার কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে হরিজনদের প্রতি একদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী ২৪ ঘন্টা দেখা হবে, এরমধ্যে হরিজনেরা কাজে যোগদান না করল বিকল্প লোক দিয়ে কাজ করানো হবে। কথায় কথায় পৌরসভাকে জিম্মি করছে ওরা। আর নয় এখন থেকে যশোর পৌরসভা তাদের বিদ্যুৎ বিলের দায় বহন করবে না। তাদের সাথে কখনও পৌরসভার এমন চুক্তি ছিল না। হরিজনরা ঘরে এসি চালাবে ও ফ্রিজ চালাবে, আর সেই বিল পৌরসভা বহন করবে এমনটি আর হবে না। তাদের নামে আলাদা প্রিপেইড মিটার দেয়া হবে। এখন থেকে তারা যে বিদ্যুৎ পুড়াবে, তারা বিল তারাই বহন করবে। পৌরসভার পক্ষে এখনও হরিজনদের জন্য ফ্রি আবাসস্থল ও পানি সরবরাহ আছে। হরিজন পল্লীর ভেতরে শুধুমাত্র পৌরসভায় কর্মরতরা থাকে না, সেখানে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, এমন অনেকেই বসবাস করেন। তারাও বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে যাচ্ছে।
পৌর মেয়র সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারলে প্রকল্প থেকে যশোর পৌরসভার যে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে, সেগুলো স্থগিত হয়ে যাবে। বর্তমান পৌর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের পর দুই ধাপেতাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দৈনিক হাজিরা ১শ’ টাকা, কিন্তু তারা কাজ করে মাত্র ১ ঘন্টা। এরপরে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে ও বিভিন্ন স্থানে চাকরি কাজ করে। কাজেই পৌরসভার অবস্থান এ বিষয়ে পরিস্কার। এখন থেকে তাদের বিদ্যুৎ বিল আর দেবে না পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা পৌর কর্তৃপক্ষকে মানহানিকর গালিগালাজ করছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডিসি ও এসপির সাথে কথা হয়েছে। সমন্বিতভাবে প্রতিহত করা হবে হরিজনদের অনৈতিক দাবি ও কর্মকান্ড।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমলু বারী অপু, নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হাসান, কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজ, রাজিবুল আলম, সাইদুর রহমান রিপন. সহকারী প্রকৌশলী কামাল আহমেদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল মেয়র মোকসিমলু বারী অপু হরিজনদের নানা অনৈতিক কর্মকান্ড তুলে ধরে পৌরসভার গৃহিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড উল্লেখ করে বক্তব্য দেন।
এদিকে, পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরন লাল সরকার বলেছেন, মেয়র তাদের সাথে আলোচনা না করেও রেলস্টেশন এলাকার হরিজন কলোনীর বিদ্যুৎ লাইন গত ৪ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। তার প্রতিবাদে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পৌর এলাকার পরিচ্ছন্নের কাজ বন্ধ রেখেছেন। সামনে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি