খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, স্টেশন মস্টারসহ সাময়িক বরখাস্ত ৩
  এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়
তীব্র রোদ ও গরমে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের

যশোরে হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে তিনজন রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরে যেন বইছে মরুভূমির লু হাওয়া। সেইসাথে তীব্র গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যশোর হাসপাতালে গরম জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় তিনজন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। রোগীর চাপ বেড়েছে বহির্বিভাগেও। হাসপাতালে শনিবার এ যাবৎকালের রেকর্ড সংখ্যক সর্বোচ্চ ৭০৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

গত এক সপ্তাহ যাবৎ তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর। প্রখর রোদ ও তীব্র গরমে ঘর থেকে বের হওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের। গরম থেকে কোথাও নিস্কৃতি মিলছে না। সোমবার দুপুর ১টায় যশোরের তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এ কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে হিট এলার্ট জারি করেছে। যশোর জেলায় গত ২০ এপ্রিল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বশেষ দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এদিকে, তীব্র তাপদাহের কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। রাস্তাঘাটে অতিপ্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষ বের হচ্ছেন না। শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা খুবই করুণ। রাস্তায় রিকশা, ইজিবাইক, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানরিকশা নিয়ে যারা বের হয়েছেন, তারা ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে উঠেছেন। রাস্তার তাপে যেনো পুড়ে যাচ্ছেন ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা। এতে তাদের রোজগারও যাচ্ছে কমে।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার প্রতি ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে তিনজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শুধুমাত্র শনিবার একদিনে হাসপাতালে ৭০৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে বেশিরভাই শিশু ও বৃদ্ধ। গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে পাঁচশ’ ৩৪, পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে তিনশ’ ৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। গত চার দিনে শিশু বহির্বিভাগে পাঁচশ’ ৬০ জন ও মেডিসিন বহির্বিভাগ থেকে পাঁচশ’ ১৫ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে শিশু বহির্বিভাগে ১৮ এপ্রিল একশ’ ৪২, ১৯ এপ্রিল একশ’ ৩২, ২০ এপ্রিল একশ’ ৪৪ ও ২১ এপ্রিল একশ’ ৪২ জন চিকিৎসা নিয়েছে। অপরদিকে, মেডিসিন বহির্বিভাগ থেকে ১৮ এপ্রিল একশ’ ১১, ১৯ এপ্রিল একশ’ ১৯, ২০ এপ্রিল একশ’ ২৯ ও ২১ এপ্রিল একশ’ ৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্তও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে একই অবস্থা বিরাজ করেছে।

বর্তমানে হাসপাতালে স্বাভাবিকের তুলনায় রোগীর চাপ বেড়েছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা বেশি। ওয়ার্ডের কোনো বেড এবং কেবিন খালি নেই। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের কোথাও নতুন আসা রোগীদের জন্য বেড খালি না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে মানুষদের। ভূক্তভোগীরা বাড়তি বেড বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।

হাসপাতালে ভর্তি যশোরের হাশিমপুর গ্রামের শিশু রোগীর মা বেবি বেগম বলেন, গত দু’দিন ধরে মেয়ে মারিয়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থাকায় হাসপাতালে ভর্তি করি। ওয়ার্ডে জায়গা না পাওয়ায় অন্য রোগীর বেডে বসে মেয়েকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।

বাহাদুরপুরের ওলিয়ার রহমান জানান, পানি শূণ্যতা নিয়ে গত তিনদিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেড পাননি। ক্লিনিকে চিকিৎসা করার সামর্থ না থাকায় গরমে হাসপাতালের বারান্দায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান।

জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জসীম উদ্দীন বলেন, গরমে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তীব্র গরমে অসচেতনতার কারণে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের অনেকেই দেরী করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই গরমে শিশুরা ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলে নিকটস্থ হাসপাতালে নেবার পরামর্শ দেন তিনি।

চিকিৎসকরা বলেছেন, এমন তীব্র গরমে মানুষের সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই গরমেও নিরাপদ ও ভালো থাকা যায়। এ সময় বাইরে বের হলে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলা জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। শরীরের কোনো অংশে সরাসরি রোদ লাগানো যাবে না। বাইরে বের হওয়ার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, সানগ্লাস ও ছাতা, মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার খোলা খাবার পানি বা সরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বোপরি সাবধানতা মেনে চলাচল করতে হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!