যশোরে তীব্র শীতে মঙ্গলবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত চিঠি জারি করেছে জেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
জেলা শিক্ষা অফিসের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন। আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হান্নান।
যশোরে এ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল সোমবার। এদিন সকাল ছয়টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর দুটোয় তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর সন্ধ্যা ছয়টায় তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত তাপমাত্রা যাই হোক না কেন কনকনে শীত বিরাজ করে সারাদিন। সাথে ছিল বাতাস। এ কারণে শীতের তীব্রতা খুব বেশি অনুভূত হয়। তারপরও সন্তানদের নিয়ে স্কুলে ছুটতে হয় অভিভাবকদের। কারণ কনকনে শীতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়। যদিও এটি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ যশোর মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া কার্যালয় বলছে, এই অবস্থা বুধবারও বিরাজ করতে পারে। কবে নাগাদ আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে সেই ব্যাপারেও কারো কাছে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। এসব কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। যদিও ১০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা নামলে আঞ্চলিক উপপরিচালকের সাথে পরামর্শ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে জেলা কর্মকর্তাদের। কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি যশোরে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা অধিদপ্তরের চিঠির অস্পষ্টতার কথা জানিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শৈত্য প্রবাহজনিত ছুটির ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন স্বাক্ষরিত পত্রে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোনো কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে সকল জেলায় ‘সর্বোচ্চ’ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে যাবে, সে সব জেলার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকগণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের একাডেমিক কার্যক্রম শীতের তীব্রতা ও স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করতে পারবেন। যার কার্যকারিতা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এই চিঠির ‘সর্বোচ্চ’ শব্দটি নিয়ে বিপাকে রয়েছেন যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। তারা দীর্ঘ আটদিনেও ‘সর্বোচ্চ’ শব্দের মানে বোঝেননি! বিশেষ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জেল হোসেন খানের মাথায় ‘সর্বোচ্চ’ শব্দটি ঢোকেনি। যে কারণে কনকনে শীত এমনকি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠার বন্ধ ঘোষণা করতে পারেননি এই কর্মকর্তা। ফলে এ নিয়ে জেলার শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলেছেন যশোরের অবস্থা কোন পর্যায়ে গেলে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করতে পারবেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের সাথে আলোচনা করে ২৩ জানুয়ারি যশোরে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এদিনও যদি আবহাওয়ার অবস্থা মঙ্গলবারের মতো থাকে তাহলে পরিচালকের সাথে আলোচনা করে ছুটি বৃদ্ধি করা হবে।
সর্বশেষ, রাত নয়টায় যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জেলার এক হাজার ২৮৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মঙ্গলবার একদিন বন্ধ রাখতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হান্নান ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আবহাওয়া অফিসের তথ্য নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ খুলনার উপপরিচালক মহোদয়ের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে যশোর জেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন।
খুলনা গেজেট/ এএজে