খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

যশোরে লকডাউনে তৎপর প্রশাসন ও পুলিশ

যশোর প্রতিনিধি

যশোর শহরের পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে সাতদিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার গভীররাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। এদিন সকাল থেকেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন শহরে চলাচলরত মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ব্যাপক তৎপরতা চালায়। লকডাউন না মেনে দোকান খোলা রাখায় ভ্রাম্যমান আদালত শহরের অর্ধশত ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন। দড়াটানামোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নির্দেশনা না মেনে চলা মানুষকে ভৎসনা করে ও যানবাহনে মামলা দেয়। এছাড়া পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাইলেনগুলোতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁশ বেধে মানুষের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। একইসাথে নওয়াপাড়া পৌর এলাকাও চলছে কঠোর বিধিনিষেধ।

যশোরে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু আশঙ্কাজনকহারে রেড়ে যাওয়ায় বিচলিত হয়ে পড়ে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮ জুন জরুরি সভার মাধ্যমে তারা বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে যশোর পৌর এলাকায় লকডাউন (কঠোর বিধিনিষেধ) আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এদিন সকাল থেকেই মাঠে নামে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। জেলা প্রশাসন শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অর্ধশত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। একইসাথে দড়াটানামোড়সহ অন্যান্য স্থানের সড়কে পুলিশ ব্যরিকেড দেয়। এসব স্থানে মাস্কবিহীন চলাচলরত মানুষকে তারা ভৎসনা করে ও নিদের্শনা মেনে না চলা যানবাহনকে মামলা দেয়। অবশ্য এসব কর্মতৎপরতার মাঝেও শহরে বিক্ষিপ্তভাবে চলাচল করেছে ইজিবাইক ও অটো রিকশা। এক্ষেত্রে তারা প্রশাসনের নিদের্শনা মানেনি। ইজিবাইকে আগের মতই ৬জন যাত্রী নিয়ে চলাচল ও অটো রিকশায় ২জন যাত্রী বহন করেছে। এছাড়া যশোরের বিভিন্ন সড়কে লোকাল বাসও যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৯ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী যশোর পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। শহরের পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ও অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভা এলাকায় এ বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় যশোর ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় গণপরিবহণ/বাস প্রভৃতি চলাচল বন্ধ থাকবে।

এছাড়া যশোর সদর থেকে যশোর-ঝিকরগাছা-বেনাপোল, যশোর-অভনগর রুটে কোন লোকাল বাস/গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে না। তবে রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। সকল প্রকার হাইওয়ে সড়কে আন্তঃজেলা গণপরিবহন সরকার কর্তৃক আরোপিত চলমান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক চলাচল করতে পারবে। কাঁচাবাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান ব্যতিত সকল দোকানপাট, শপিংমল, বিপণীবিতানসমূহ বন্ধ থাকবে।

আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা যেমন, কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনার টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর সমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারি ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোঁরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে। তবে এসব হোটেল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (বিক্রয়/ অনলাইনে) করতে পারবে। সবাইকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কোনভাবেই বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না।

জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে করতে হবে। মোটরসাইকেলে চালক ব্যতিত অন্য কোন আরোহী বহন করতে পারবে না। রিকশায় শুধুমাত্র ১ জন ও সকল ধরণের ইজিবাইক ও অটোরিকশায় সর্বোচ্চ ২ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। শিল্প-কলকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। সকল পর্যটনস্থল, পার্ক, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

জনসমাবেশ হয় এমন ধরণের সামাজিক (বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ ২০ (বিশ) জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন। ঘর থেকে ওজু করে সুন্নত নামাজ পড়ে মসজিদে যেতে হবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপসনালয়েও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপসনা করতে পারবেন। সকল জরুরি নির্মাণ কাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে। এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভুত হবে। ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা উচ্চ সংক্রমণের এলাকা চিহিৃত করে সংশ্লিষ্ট করোনা প্রতিরোধ কমিটি অনুরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করবেন। জেলার অন্যান্য উপজেলাসমূহে/ এলাকায় সরকার কর্তৃক স্মারকে ঘোষিত বিধিনিষেধ চলমান থাকবে। যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার, জন সচেতনতায় শহরে মাইকিং ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, যশোরে করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ৮ জুন প্রতিরোধ কমিটির সভার মাধ্যমে যশোর পৌর এলাকা ও অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যা আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

তিনি জানান, সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাজারে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। এছাড়াও গণসমাবেশ ও অনুষ্ঠান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন ও দোকানপাট শপিংমল বন্ধ থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন রাতে করোনা কমিটির সভায় যশোর পৌরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ও নওয়াপড়া পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। এ দুটি ওয়ার্ডের কয়েকটি সড়কে ওইদিন রাত থেকেই বাঁশ বেধে মানষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে গোটা পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!