খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  আজ খুলছে সব স্কুল-কলেজ
  রাতভর জ্বলছে সুন্দরবন, দেড় কি.মি. এলাকাজুড়ে আগুন
ক্ষুব্ধ সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নিহত ১০ জনের স্বজন

যশোরে নৃশংসতম উদীচী হত্যাযজ্ঞের বিচারহীনতার ২৫ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরে নৃশংসতম উদীচী হত্যাযজ্ঞের ২৫ বছর পূর্তি আজ বুধবার। শতাব্দির ভয়াবহ এ হত্যাকান্ডের ২৫ বছর পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের। গত ১৮ বছর যাবৎ আটকে রয়েছে মামলার বিচারকি কার্যক্রম। এমনকি কারা এ জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল তাও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি আজও। ঘাতকদের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহত ও আহতদের স্বজন এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

ঐতিহাসিক যশোর টাউন হল মাঠে ১৯৯৯ সালের ৫ ও ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন। প্রথমদিনের অনুষ্ঠান সফলভাবে শেষ হবার পর ৬ মার্চ ছিলো সমাপনী অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে বাউল গানের আসরে রাত ১ টা ১০ মিনিটে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মী ও দর্শক প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ।

নিহত হন নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বুলু, রতন রায়, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম ও রামকৃষ্ণ।

প্রতিবছর এই দিনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে আলোক প্রজ্জ্বলন আর বিচারের দাবি করে আসছেন নিহত ও আহতদের স্বজন বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এ কারণে উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এতবড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা।

উদীচী ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এ মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের স্বজনরা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই।

বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, একের পর এক বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু উদীচী হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বতর্মানেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাডেজির বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে। অবিলম্বে উদীচী হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি।

এদিকে, দিনটি উপলক্ষে মঙ্গলবার যশোর উদীচী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উদীচী কর্মকর্তা আব্দুল আবফান ভিক্টর। উপস্থিত ছিলেন উদীচীর সভাপতি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লবসহ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের দেয়া কর্মসূচীতে রয়েছে বুধবার সন্ধ্যায় টাউন হল মাঠের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রতিবাদী মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!