যশোরে হেরোইন ও সোনা চোরাচালনের পৃথক তিন মামলায় দু’জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও অপর একজনের ১৪ বছরের কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছে পৃথক দুটি আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ৩ জুলাই সকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর সার্কেলের সদস্যরা শহরের শংকরপুর বিহারীপাড়ায় মেহেদি হাসানের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া প্রিয়া বেগম আলেয়া ওরফে সুপ্রিয়াকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা। এ পর্যায়ে সে স্বীকার করে তার কাছে হেরোইন রয়েছে। পরে প্রিয়া শরীরে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা একটি থলে বের করে দেয়। ওই থলে থেকে ৮৩ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রিয়া ও তার স্বামী ছোট বাবু এবং ওই বাড়ির মালিক মেহেদি হাসানকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সাইদুর রহমান। মামলাটি তদন্ত করে তিনি ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সোমবার মামলার রায়ে অতিরিক্ত দায়রা জজ তাজুল ইসলাম প্রিয়া বেগমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। এছাড়া অপর দুই আসামিকে খালাশ প্রদান করেন।
এদিকে, ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছী প্রাইমারি স্কুলের সামনে বিজিবির টহলদলের একটি মোটরসাইকেল দেখে সন্দেহ হয়। আরোহীকে থামানোর সংকেত দিতেই তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি সদস্যরা মোটরসাইকেলসহ বেনাপোলের নামাজগ্রামের জব্বার মিয়ার ছেলে ইসমাইল হোসেনকে আটক করে। এসময় ইসমাইলের দেহ তল্লাশী করে ১০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। যার দাম ৮১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় শার্শা থানায় মামলা করেন জেসিও সুবেদার আকবর আলী মোল্লা। মামলাটি তদন্তে ইসমাইল হোসেনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেন এসআই তারিকুল ইসলাম। সোমবার একই আদালত ইসমাইল হোসেনের ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। বিচারক দুই আসামির উপস্থিতিতেই রায় ঘোষনা করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ দুটি রায়ের বিষয় নিশ্চিত করেন আদালতের অতিরিক্ত পিপি আসাদুজ্জামান।
এছাড়া, যশোরে হেরোইনের আরও একটি মামলায় হারুলাল অধিকারী নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন অপর একটি আদালত। একইসাথে তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। যশোরের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এ রায় প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পেশাল পিপি সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা। সাজাপ্রাপ্ত হারুলাল যশোর শহরের রেলবাজার এলাকার পঞ্চানন অধিকারীর ছেলে।
হারুলাল ২০০২ সালের ১৫ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিজিবি’র হাতে বেনাপোলের বড়আঁচড়া থেকে ১৭০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়। ওই মামলার আসামি হারুলাল অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে এ সাজা প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেওয়া হয়।