খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৪ মে, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, স্টেশন মস্টারসহ সাময়িক বরখাস্ত ৩
  এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়

যশোরে চাল ও ভোজ্যতেলের মূল্য লাগামহীন

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

যশোরে রেকর্ড মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পামওয়েল ও সোয়াবিন তেল। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি সয়াবিন তেল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও পামওয়েল ১শ’ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এতবেশি দামে যশোরের বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েল বিক্রি হয়নি। একইসাথে চালের বাজারও লাগামহীন হয়ে উঠেছে। একমাসের ব্যবধানে সব ধরণের চাল প্রতি কেজিতে বেড়েছে আরো ৫ থেকে ৭ টাকা। যা কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের এখন পরিবার নিয়ে খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

দেশে পৌষ মাসের তীব্র শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাল, ডাল ও তেলের দাম। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বাজারদর। কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়াচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব প্রতিরোধে কেউ নেই। যশোরে নাম কা ওয়াস্তে একজন বাজার কর্মকর্তা থাকলেও তার ভূমিকা রহস্যজনক। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে তাকে কোথাও দেখা যায় না। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তারাও রয়েছেন বাজার মনিটরিং কার্যক্রমের বাইরে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। আর এ নিরবতার মাশুল গুনছে সাধারণ মানুষ। তাদের পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে চাল ও তেল কিনতে গিয়ে। এ নিয়ে তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

যশোর বড়বাজারের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ব্যারেলের খোলা সোয়াবিন তেল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এ তেলের মধ্যে ভালোমন্দ দুই ধরণের মান রয়েছে। এক্ষেত্রে মূল্যেরও তারতম্য রয়েছে। একইসাথে শীতের জমাটবাধা পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে ১০৫ টাকায়। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজিতে। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে বিক্রির রেকর্ড। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিপুল এ দামে তারা এর আগে কবে সয়াবিন তেল ও পামওয়েল বিক্রি করেছেন সেটা তাদের জানা নেই। কী কারণে এ মূল্য বৃদ্ধি সেটাও তারা জানেন না।

তারা বলেছেন, শীতকালে সাধারণত তেলের দাম বৃদ্ধি পায়। কারণ হচ্ছে শীতে পামওয়েল জমে যায় ও সোয়াবিন তেল জমে না। এ কারণে পামওয়েলের বিক্রি কমে যায়। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে নিম্নমানের সোয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকেন। ফলে বেড়ে যায় এ তেলের দাম। কিন্তু এতোবেশি দামে এরআগে তারা কখনো তেল বিক্রি করেননি। আর দামবৃদ্ধির কারণও তারা মানুষকে জানাতে পারছেন না। যদিও ব্যবসায়ীরা নিজেরাও বুঝতে পারছে না কী কারণে এ মূল্যবৃদ্ধি।

এ ব্যাপারে শহরের কাঠেরপুল এলাকার ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান বলেন, তিনি গত ২৫ বছর যাবৎ মুদিখানার ব্যবসা করছেন। কিন্তু বিপুল পরিমান এ দামে তিনি গত ৫ বছরেও সোয়াবিন তেল বা পামওয়েল বিক্রি করেননি। ইতিমধ্যে তিনি পামওয়েল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া সয়াবিন তেলও দোকানে কম উঠাচ্ছেন।

একইসাথে গত তিনমাস যাবৎ চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। যশোরের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। বর্তমানে বাসমতি চালের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা, কাজললতা ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকায়। এরআগে গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব চালের মূল্য কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা কম ছিল বলে বড় বাজারের হাটচান্নির চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, দেশের ৪টি কোম্পানী মূলত তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। যশোরের পাইকার ও খুচরো ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে অসহায়। তারা মিলগেট থেকে বেশি দামে তেল বিক্রি করছে, কিন্তু এ সংক্রান্ত রশিদ দিচ্ছে না। ফলে দেশে তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। তারপরও আমরা তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছি। ডকুমেন্ট পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, মিলগেটে চারটি কোম্পানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। কর্তৃপক্ষ যশোরের বাজার তদারকি করছেন। দ্রæতই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!