যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও আবাসিক হলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসাথে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সোমবার (০৩ এপ্রিল) বিকেলে যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে দুপুরে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন এনএফটি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। ঘটনার ভয়াবহতা বিবেচনায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ইতিমধ্যে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্টকে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং আক্রান্ত শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শহীদ মসিয়ূর রহমান হল কর্তৃপক্ষও সহকারী প্রভোস্ট তরুণ সেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বডিকে তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, রবিবার রাতেই শহীদ মসিয়ূর রহমান হল কর্তৃপক্ষ ইসমাইল হোসেনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমানকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে। রোববার রাতে ঘটনার পরই যবিপ্রবি হল প্রশাসন আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। মধ্যরাতে যবিপ্রবি উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর শারীরিক খোঁজ-খবর নেন। বর্তমানে ইসমাইল হোসেনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী শোয়েব ও সালমানকে বহিস্কারে খুশি নয় যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন। এতে ছাত্রলীগ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাফ কথা অপরাধী যেই হোক, তাকে শাস্তি দিতে হবে।
আরো পড়ুন :
উল্লেখ্য, যবিপ্রবির ওই শিক্ষার্থীকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে আটকে রেখে রোববার মারপিটসহ ব্যাপক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরে রাতে কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তার নির্দেশে কক্ষটি সিলগালা করে দেয়া হয়। এরআগে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মারধর করা হয় ইসমাইলকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পর আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মশিউর রহমানের হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষ সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই কক্ষের দু’শিক্ষার্থীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে মামলা করতে সহায়তা করা হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি