খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

মানুষ সেবার মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য হাসিল করতে চান ডাঃ মিজানুর

বশির হোসেন

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, মহান এই বাণী কালে কালে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখা গেলেও বিশাল এই পৃথিবীতে যার সংখ্যা যৎসামান্যই। তারপরও কর্মবীর এসব মানুষ আছে বলেই মানুষ এখনও স্বপ্ন দেখে। করোনা মহামারীতে যে মুহুর্তে নিজ বাচাটাই একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে অনেকে ঠিক তখন মানুষকে সেবা দিয়ে বাঁচানোর ব্রতও রয়েছে যে গুটি কয়েক মানুষের ডাঃ মিজানুর রহমান তার মধ্যে একজন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তিনি। করোনার এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব ও চাকুরীর গোন্ডি পেরিয়ে প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে চলেছেন মানুষের হৃদয়। এ তালিকায় যে সাধারণ রোগী শুধুমাত্র তা নয়। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেক বড় বড় চিকিৎসককে না দেখিয়ে নিজের রোগ নিয়ে চলে আসেন তার রুমে। চিকিৎসার পাশাপাশি তার মানবিক আচরণে মুগ্ধ হয়েই তিনি মানুষের কাছে  স্বল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

মানুষের সেবা করলে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করা যায় এই আত্ম উপলব্ধি আর অনুভূতি নিয়ে করোনার সংকটময় মুহূর্তে তিনি ক্লান্তিহীনভাবে সকাল-সন্ধ্যা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন করোনা রোগীদের সেবা দানের জন্য। খুমেক হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড ইউনিট, করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র ও ফ্লু কর্ণারের সমন্বয়কারী তিনি। সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে রোগীদের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করছেন নিরলসভাবে।

চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি তিনি আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসাবে যোগদান করেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দায়িত্বপালনে তার নিষ্ঠা আর কর্মস্পৃহার খবর সেদিন ছাপা হয়েছিলো খুলনার স্থানীয় দৈনিক গুলোতে। দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আরএমও’র দায়িত্ব পালনের শেষের দিন তার বদলীর বিরোধিতা করে রাস্তায় নামেন ফুলতলাবাসী। মিছিল, মানবন্ধন ও সভা সমাবেশ সবই সেদিন করেছিলো ফুলতলার মানুষ। প্রিয় চিকিৎসককে কাছে না পাওয়ার চিন্তায় সেদিন তারা আন্দোলন করেছিলো তার বদলী আদেশের বিরুদ্ধে। সেদিন ফুলতলাবাসীর জন্য মন কিছুটা কষ্ট হলেও তাকে মোহিত করেছিলো নিজের ছাত্রজীবনের ক্যাম্পাসে চিকিৎসক হয়ে আসার সুখানুভূতি। ডাঃ মিজানুর রহমান খুলনা মেডিকেল কলেজের কে-১০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিজের প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেই দায়িত্ব নেন তিনি। শুধুই কি রোগীদের চিকিৎসা দেয়া। একজন চিকিৎসক হিসাবে সরকারি চাকুরীর কারণেই কি দায়িত্ব পালন করা ? না, তার সু-বিশাল কর্মজ্ঞ সে কথা বলে না। করোনার মধ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা করে চলেছেন সাধারণ মানুষের।

জুন মাসের ৩ তারিখে তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। প্রথম থেকে করোনা ডে‌ডিকেটড হাসপাতালের সমন্বয়কারীর দা‌য়িত্ব পালন করলেও এবার কাধে আসে খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সনের। হাসপাতাল পরিচালকের দেয়া এ দায়িত্বের কর্তব্য সম্পর্কে আগেই জানতেন তিনি। জানতেন তার ঘুম খাওয়া আর ঠিক মত না হলেও মানুষকে সেবা দিতে হবে। করোনা পরীক্ষা করিয়ে সময়মতো রিপোর্ট দিয়ে তার কাঙ্খিত সেবা দিতে হবে। এই দায়িত্ব নেয়ার পর পূর্বের তুলনায় আরও গতিতে এগিয়ে ডাঃ মিজানুর রহমান। যুদ্ধে নামলে আক্রান্ত হবে না সেটা সম্মুখ যোদ্ধাদের সাথে বেমানান । সরাসরি করোনা রোগীদের কাছে যাওয়ায় গত ২৫ জুন নিজেই আক্রান্ত হন মহামারী করোনা ভাইরাসে। তবে মানুষের ভালোবাসা সঠিক নিয়মানুবর্তিতায় মাত্র ১২ দিনে নেগেটিভ হয়ে আবারও হাজির হন যুদ্ধের ময়দানে। আগের থেকে আরও বেশি গতিতে সেবা করে চলেছেন মানুষের।

ডাঃ মিজানুর রহমান একাধারে খুলনা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নুরনগরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সহকারী সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালের রোষ্টার, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ ও হাসপাতালের চিকিৎসার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছেন মানুষের জন্য। কথা বলছেন করোনা রোগীদের সাথে। সাধ্যমত চেষ্টা করছেন সমস্যার সমাধান করার।

ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমি খুলনা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম। এখানে চাকুরীতে আসার আগে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। মানুষকে আমি সব সময় সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম মেনে চলার চেষ্টা করি। তাই আমি বিশ্বাস করি মানুষকে সেবার মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করা হয়। আর সেই ব্রত নিয়েই আমি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই করে যেতে চাই। অনেক সময় আমাদের অনেক কিছু সামর্থ্যের মধ্যে থাকে না রোগীরা এটা বুঝতে চায় না। তখন তাদের জন্য কষ্ট লাগে। তারপরও যতটুকু পারি অন্তত ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করি।

 

খুলনা গেজেট / এমবিএইচ / এমএম 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!