খুমেক হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদারের প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মন্দিরা মজুমদার। বাবা প্রদীপ মজুমদার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজিও ছিলেন। কিন্তু সুহাসের দিক থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে মেয়ে হতাশায় ভুগতে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় মন্দিরা। মন্দিরার সাথে ডা. সুহাসের প্রতারণা যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে।
মন্দিরার বাবা প্রদীপ মজুমদার খুলনা গেজেটকে বলেন, মন্দিরা আমাদের বড় সন্তান। চিকিৎসক হওয়ার শখ ছিল তার। বেসরকারিভাবে তাকে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজে ভার্তি করা হয়। গেল বছরের ডিসেম্বরে এমবিবিএস পাস করে সে। এরপর বাসায় থেকে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্ততি নিতে থাকে। মন্দিরার মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউটের একজন কর্মকর্তা। এরমধ্যে তিনি পিত্তথলি জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। সেখানে অপারেশনের জন্য গেলে হাসপাতালের ঐ চিকিৎসকের সাথে মেয়ের পরিচয় হয়।
খুমেক হাসপাতালের ঐ চিকিৎসক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মন্দিরার সাথে সম্পর্ক করে। সিথি মনি হালদার সুহাস রঞ্জনের বড় বোন। বয়রায় তাদের বসবাস। সেখানে গিয়ে তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। সম্পর্ক যখন গভীরে পৌঁছায় মন্দিরা তখন জানতে পারে সুহাসের পূর্বের ঘরে একটি স্ত্রী রয়েছে। তখন সেই অবস্থা থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে মন্দিরা বুঝতে পারেন তিনি সন্তান সম্ভবা। কয়েকবার আল্ট্রাসনো করাও হয়। বিষয়টি আলোচনা করলেও সুহাসের মন গলেনি। আবাসিক ওই চিকিৎসক তাকে গর্ভপাত করার পরামর্শও দেয়।
এরপর ১৫ নভেম্বর বাইরে ঘুরতে নেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় তারা দু’জন। সেখানে গিয়ে বিয়ের কথা বললে তাকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয় সুহাস। পরে বাড়ি এসে ঘটনাটি মন্দিরা পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করেন। এঘটনা শুনে বাবা মায়ের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।
এসব জানার পরও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা প্রদীপ মজুমদার বিয়েতে রাজি ছিল। সুহাসের বোন সিথি মনির সাথে আলোচনা করা হয়। কিন্তু সে রাজি হয়না। এরপর থেকে মেয়ে মন্দিরা প্রায় দরজা বন্ধ করে একা ঘরে অবস্থান করত। মেয়ের এরকম আচারণ দেখে প্রদীপ খুমেক হাসপাতালের ঐ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাতেও কোন সুরাহা হয়নি। মেয়ের সাথে অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করা হতো।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন চিকিৎসক মন্দিরা। তাকে ঘটনাটি খুলে বলেন। ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। এরপর সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ খুমেক’র আবাসিক চিকিৎসক সুহাসের সাথে যোগাযোগ করেও তিনি ব্যর্থ হন। হতাশা থেকে পরিত্রান পেতে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় মন্দিরা।
প্রদীপ মজুমদার আরও বলেন, খুমেক হাসপাতালের ঐ চিকিৎসক মন্দিরাকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচণা দিয়েছে ডা. সুহাস। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।
খুলনা গেজেট/ এস আই