জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ২০২১ সালের ২৪ মে খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত এবং আকাঙ্ক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মাঝখানে কেটে গেছে ৩২ মাস। ৩২ মাসে কাজের অগ্রগতি ১২ শতাংশ। দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র ৯ টি পিলার। এরমধ্যে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ৭ টি এবং রেলিগেট প্রান্তে নদীর তীর সংলগ্ন ২ টি পিলার নির্মাণ হয়েছে।
সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে কাজ চলমান থাকলেও অপর প্রান্ত রেলিগেট থেকে দৌলতপুর মুহসিন মোড় পর্যন্ত সেতুর শহরাংশে নির্মাণ কাজ থমকে আছে। এ প্রান্তে সেতু নির্মাণের জন্য ব্যাক্তিমালিকানাধীন জায়গা অধিগ্রহণ হলেও অধিগ্রহণকৃত জায়গার উপর থেকে স্থাপনা অপসারণ করা হয়নি। এখনও জায়গা বুঝে পাইনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । বাকি রয়েছে রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণের। ফলে দ্বিতীয় দফা মেয়াদে সময় বাড়ানোর পরও চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হচ্ছে না ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। তৃতীয় দফায় আরো ২ বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। খুলনাবাসীর প্রশ্ন কবে নাগাদ শেষ হবে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ?
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সরোজমিনে সেতুর উভয় প্রান্ত ঘুরে দেখা যায় দিঘলিয়া প্রান্তে কাজ চলমান রয়েছে আর রেলিগেট প্রান্তে সুনশান নীরাবতা।
সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার এস এম নাজমুল জানান, সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৩৪ টি পাইল রয়েছে যার সবগুলো পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রান্তে ১৩ টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৭ টি’র কলাম ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ টি পিলারের মধ্যে ৯ টি’র পাইল ক্যাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ৪ টি’র কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হবে। এ প্রান্তে সেতুর কাজের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ। সেতুর শহরাংশে জায়গা বুঝে না পাওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। কাজে লাগাতে পারছি না পাইলিং মেশিন। তিনি বলেন, খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)থেকে আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে আগামী ২/১ মাসের মধ্যে সেতুর শহরাংশের অধিগ্রহণকৃত জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। জমি বুঝে পাওয়ার পরে এ প্রান্তে আমরা দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করবো।
সেতুর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) ‘র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, সেতুর শহরাংশের অধিগ্রহণকৃত ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে স্থাপনা অপসারণের টেন্ডার আহবানের অনুমতি চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ কৃত জমির উপর থেকে স্থাপনা অপসারণ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিতে পারবো। আর রেলওয়ের জায়গা লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের ৮ কোটি ৭৮ লক্ষ্য টাকা অনুমোদনের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রেলের জায়গাও আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবো।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। আর সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১২ শতাংশ। নির্মাণ কাজের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে ২ বছরের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেতুর নির্মাণ কাজে ধীর গতির জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে। কাজের গতি বাড়ানোর জন্য তাদেরকে সতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজ ‘র খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর কি দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ।
ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এর মাধ্যমে সেতুর শহরাংশে কুলিবাগান হতে রেলিগেট ভৈরব নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে। সেতুর রেলিগেট প্রান্তে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে নদী পার হতে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এই দুই পিলারের উপর স্টিলের সেতু বসবে।
প্রসঙ্গত, ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকী টাকা সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে।