খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৭ মে, ২০২৪

Breaking News

ভাষা আন্দোলনে শান্তিনিকেতন, ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও রবীন্দ্রনাথ

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, কলকাতা

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তঝরা ভাষা আন্দোলনের জন্যই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের বাঙালিরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। আর সেই ভাষার জন্য তাদের প্রাপ্তি বাংলাদেশ নামক একটি রত্ন। যে রত্ন অর্জিত হয়েছিল এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমরা কি জানি ব্রিটিশ ভারতেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্ম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রখ্যাত ভাষাতত্তববিদ ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ শান্তিনিকেতন থেকে একটা উদ্যোগ শুরু করেছিলেন? ইতিহাসের এই অধ্যায়টি আজো যেন বিস্মৃত। কী সেই অধ্যায়? আসুন একটু দেখা যাক।

১৯২০ সাল। ব্রিটিশ ভারতে তখন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল প্রবাহ। ব্রিটিশ ভারতে ভারতের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, এই নিয়ে কংগ্রেস মুসলীম লীগের দ্বন্দ্ব। কংগ্রেস হিন্দীকে আর মুসলীম লীগ উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে পৃথক পৃথকভাবে অনড়।

সেই সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটা বিশাল সভা ডেকেছিলেন। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন কবিগুরু স্বয়ং । আর প্রধান বক্তা ছিলেন ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সেদিন শহীদুল্লাহ তার জ্বালাময়ী ভাষণে বলেছিলেন , কেন বাংলা হবে ভারতের রাষ্ট্রভাষা। অবিভক্ত বঙ্গ, অসম , ত্রিপুরা , বিহার ও ওড়িশার একাংশ ছিল বাংলাভাষী যা যেকোনো ভাষাভাষীদের থেকেও বেশি। তাই শহীদুল্লাহর জ্বালাময়ী ভাষণ থেকে এই আসল সত্যটি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই বেরিয়ে। তাঁর এই যুক্তিগ্রাহ্য জ্বালাময়ী ভাষণ রবীন্দ্রনাথের কাছে খুব হৃদয়গ্রাহী হয়।

সেই ভাষণ বিখ্যাত ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকাকে গুরুত্ব দিতেন রবীন্দ্রনাথ । এই আন্দোলন বেশ দানাও বেঁধেছিল। কিন্তু খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। রবীন্দ্রনাথের শারিরীক অসুস্থতা, ব্রিটিশদের হীন চক্রান্ত আর কিছু এদেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের জন্য আন্দোলন থেমে যায়।

গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। দেশ ভাগ হয়েছে। বাংলা ভাগ হয়েছে। শহীদুল্লাহ সাহেব ছিলেন বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণার হাড়োয়া থানার পিয়ারা গ্রামের ভূমিপুত্র। তাঁর মামার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি ছিল দেগঙ্গা থানার ভাসিলিয়া গ্রাম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের গবেষণা সহায়ক ছিলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আমন্ত্রনে ঢাকা চলে গেলেন।

রবীন্দ্রনাথ অসুস্হ হয়ে পড়লেন। শান্তিনিকেতনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন থেমে গেল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগ। ১৯৪৮ সালেই পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উথ্থাপন করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি তো ভাষা আন্দোলনের চাবি। তাকেই বা কতটুকু মনে রেখেছি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও তামুদ্দিন মজলিস গঠিত হয়েছিল, সেই দুটো সংগঠনের প্রাণ পুরুষ ছিলেন ভাষাতত্ত্ববিদ ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি চর্যাপদকে সাজিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে একটু অন্যভাবে গুরুত্ব দিতেন। ভাষা নিয়ে তার অনেক গ্রন্থ রয়েছে। বাংলা উপভাষার অভিধান প্রণয়ন করেন তিনিই প্রথম। পূর্ববঙ্গ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তার ৯ ছেলেমেয়ে ভাষা আন্দোলনে বড় ভূমিকা পালন করেন। তারা হলেন মাহযূযা খাতুন (মঞ্জু), মাসরুরা খাতুন (গোলে), আবুল ফজল মুহম্মদ সফিউল্লাহ (সফি), আবুল কালাম মোস্তফা ওলিউল্লাহ (ওলী), আবুল করম মুহম্মদ যকীউল্লাহ (যকী), আবুল জামাল মুহম্মদ তকীউল্লাহ (বেলাত), আবুল বয়ান মুজতবা নকীউল্লাহ (প্যারিস), আবুল ফজল মুতাওয়াক্কিল রাযীউল্লাহ (লালু) ও আবুল খায়ের মোর্তুজা বশীরুল্লাহ (বকুল)। আজ কিন্তু ইতিহাসের এই পর্বটি বিস্মৃত। ইতিহাস, তুমি আবার জেগে ওঠো। ” হে অতীত, তুমি ভুবনে ভুবনে কাজ করে যাও গোপনে গোপনে”।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!