খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন স্বামী, বেঁচে গেলেন স্ত্রী
  সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে : ইসি রাশেদা
  ময়মনসিংহে বাসের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত

ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

গেজেট ডেস্ক

ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুতখাত সহায়তা বিষয়ক যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এতদিন পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সামনে এনে বাংলাদেশ করিডোর দেওয়ার ক্ষেত্রে যৌথ নদী কমিশনে সেটি তোলার দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে সেই দাবি থেকে সরে এসে যৌথভাবে ৭৬৫ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়ে ভারতের প্রস্তাবে ঢাকা সম্মতি দিয়েছে।

ভারতের বিদ্যুৎ সচিব অলোক কমুারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গেল দুই দিনে ঢাকায় আসেন। প্রতিনিধি দলে দেশটির বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবজাল হোসেন ছাড়াও উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির প্রনিনিধিরা রয়েছেন।

বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন  বলেন, ‘আজকের মিটিং দুটি এজেন্ডা ছিল। একটি ৭৬৫ কেভির সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। সেটির বিষয়ে যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর এর ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎক্রয় চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

বৈঠকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সঙ্গে ভারতের সেন্ট্রাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি যৌথভাবে একটি কোম্পানি গঠন করবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জমি দেবে আর ভারত অর্থায়ন করবে। তবে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সহজ কোনো পদ্ধতি অনুসরনের ওপর জোর দিয়েছে দিল্লি।

চূড়ান্ত হওয়া বিদ্যুৎ করিডোরটি কাটিহার-পার্বতীপুর-বরানগরকে সংযুক্ত করবে। অর্থাৎ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৬৫ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি ভারতের কাটিহার ও বরানগরকে সংযুক্ত করবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০০ কেভি ক্ষমতার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ভারত বিদ্যুৎ করিডরের নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল। কিন্তু ঢাকা নানাভাবে বিষয়টিতে বিলম্বিত করছিল। কারণ সেভেন সিস্টারে (আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড) জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে তার প্রভাব কতখানি পড়বে সে বিষয়ে কোন দেশই নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় ঢাকা একটি যৌথ পরিবেশগত সমীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছিল।

ভারত দাবি করছে, এই অঞ্চলের সাতটি রাজ্যে অন্তত ৪০ হাজার মেগাওয়াট জল বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তবে ওই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় ভারত বাংলাদেশর ওপর দিয়ে তার অন্যাঞ্চলে বিদ্যুৎ নিতে চায়।

বাংলাদেশ সম্প্রতি নেপাল থেকে ভারতীয় গ্রিড লাইন ব্যবহার করে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার প্রস্তাব দেয়। দিল্লি সরাসরি এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে ঢাকাকে জানায়, নতুন কোনো গ্রিড লাইন নির্মাণ হলে এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এরপর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারত সফরে গেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ভারত তখন আশ্বস্ত করে পরবর্তী যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা যেতে পারে। এরপর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান থাইল্যান্ডে ভারতের বিদ্যুৎ সচিব অলোক কুমারকে একই বিষয়ে অনুরোধ করেন। তবে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি বৈঠকের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্তই হয়নি।

উজান থেকে পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষির জন্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এখনও তিস্তা চুক্তি সইয়ের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দেশের পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত উদ্যোগী হলে সিলেট অঞ্চলে একই সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। ঢাকার তরফ থেকে দিল্লীকে   এই উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিষয়টি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে আলোচনার কথা বলা হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যৌথ নদী কমিশনে বিষয়টি আলোচনা হবে কি না সেটি বৈঠকে তোলা হয়নি। বাংলাদেশ এই লাইন থেকে হুইলিং চার্জ (বিদ্যুৎ সঞ্চালন মাশুল) ছাড়া আর কি পাবে জানতে চাইলে বলেন, এজন্য ভারত-বাংলাদেশ ছয় সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

জিএমআরএর সঙ্গে ৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎক্রয় চুক্তি

ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর নেপালে একটি জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের কাছে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় দিল্লি। এই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য দেশটির ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে। ভারত ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ার বিষয়ে আগেই সম্মতি দিয়েছে। এখন জিএমআরের সঙ্গে বিদ্যুৎক্রয় চুক্তি করার বিষয়ে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!