খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা-বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
  ভারতে দুই ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ, ১২ বগি লাইনচ্যুত

ভদ্রার ভাঙনে ভিটে ছাড়া ডুমুরিয়া চাঁদগড়ের বাসিন্দারা

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া

ভদ্রা নদীর পাড়ে মাথায় হাত দিয়ে চিন্তামগ্ন পঞ্চাশউর্ধ ফিরোজা বেগম। ভাবছেন এই বুঝি তার সর্বশেষ আশ্রয় স্থলটুকু চলে যায় ভদ্রা নদীর পেটে। এক সময়ে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের চাঁদগড় গ্রামের গৃহবধু হিসেবে এই গ্রামে এসেছিলেন তিনি। স্বামী গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মোঃ মতলেবুর রহমান চিকিৎসা দিয়ে বেড়াতেন। তাদের গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, বাড়ির উঠোন চরে বেড়াতো হাঁস-মুরগী। আজ সেসব অতীত। এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে।

 

শুধু ফিরোজা বেগম নয়, এমন চিন্তা মেহেরুন্নেছার, জবেদ আলী, হাবিবুর রহমানদেরও। প্রায় তিনযুগ ধরে ভদ্রা নদীর ভাঙনে ২৯ নম্বর পোল্ডারের জালিয়াখালী, বারোআড়িয়া, শরাফপুর, চাঁদগড় গ্রামের দেড়শতাধিক পরিবার আজ গৃহহীন। ভদ্রা নদীর ভাঙন ডুমুরিয়ার চাঁদগড়ের পরিবার গুলো ভিটে ছাড়ার উপক্রম হয়েছে। আতঙ্কে প্রতিটি দিন কাটছে বেড়িবাঁধে বসবাসকারী মানুষের।

সরেজমিনে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৯নং পোল্ডারের স্বাধীনতার পর থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের জেলেখালী ও চাঁদগড় দুটি গ্রাম ভদ্রা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হতে চলেছে। নদীগর্ভে সর্বস্ব হারানো মানুষের জিজ্ঞাসা এ ভাঙন রোধ হবে কি?

মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙন রোধের নামে নামমাত্র কাজ করে থাকলেও নেই কোন স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা। শুষ্ক মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের নামে স্থানীয় লোকদের নিয়ে কাজ করে জোড়াতালি দেয়। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এ অভিযোগ স্থানীয় জনগণের।

চাঁদগড় গ্রামের বসিন্দা জবেদ আলী বিশ্বাস (৭০) দুঃখ করে বলেন, প্রায় ৫০ বছর যাবত ভাঙন দেখছি। ভাঙন হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড যেনতেনভাবে মেরামত করে। অথচ কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হলেও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

 

একই গ্রামের মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড অর্থ লুটপাট করছে বলে মনে হয়। না হলে যেনতেনভাবে বাঁধ কেন আটকানো হবে। দীর্ঘদিন ভাঙন চলে আসলেও প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা কেন নেয়া হয় না। তিনি বলেন কয়েক বছর আগে চাঁদগদের এই স্থানে ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সে সময়ে ৫০এর অধিক পরিবার ভিটেমাটি হারা হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে এখন পর্যন্ত ভেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান ১৯৬৭-৬৮ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নির্মাণ করা ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৯ পোল্ডার এর বেহাল দশার কারণে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৫৫টি গ্রাম নদী ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মওসুম এলে ৩-৪ বার বাড়িঘর, জমি, গাছপালা ও বেড়িবাঁধ ধসে নদীতে চলে যায়। তখন সকলের শোরগোল পড়ে ভাঙন রোধের জন্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের নজর পড়ে। তড়িঘড়ি করে নুতন করে বাঁধ দেয়ার কাজ হয়। কিন্তু নদীর প্রবল পানির চাপে বাঁধ গুলো নদীগর্ভে চলে যায়।

ইতোমধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের দেড় কিলোমিটার বির্স্তীর্ণ জালিয়াখালি গ্রাম ভদ্রা নদীর ভয়াল গ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেখানকার প্রায় ১২শতাধিক মানুষ। শতাধিক কাঁচাপাকা ঘরবাড়ী সহ কয়েক একর জমাজমি নদী ভাঙনে হারিয়েছে এখানকার মানুষ।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডুমুরিয়া উপজেলা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান জানান, চাঁদগড়সহ ২৯ নম্বর পোল্ডারের ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশে নতুন করে বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে মাটি বালিযুক্ত তাই এটি পানির চাপ তেমন ধরে রাখতে পারে না।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!