খুলনা সদর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বেপরোয়া ছিলেন হাসান আল মামুন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও আওয়ামী লীগের কর্মীর মতো আচরণ করতেন বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। তার মধ্যে পেশাদারিত্ব ছিল না। উস্কানি ছাড়াই বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তুষ্ট করতে ওসি হয়েও নিজে লাঠিচার্জ করেছেন বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাদের।
রবিবার হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় জামিন নিতে আসলে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তীব্র ক্ষোভ থেকে তাকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেন অনেকে। স্লোগান দেন শাস্তির দাবিতে। পরে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো শরীফ হোসেন হায়দার তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
র্খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২ জুন খুলনার দৌলতপুর থানা থেকে খুলনা সদর থানায় যোগদান করেন ওসি হাসান আল মামুন। দায়িত্ব পালন করেন ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পুলিশ কর্মকর্তা হলেও তার ভেতর পেশাদার মনোভাব কখনোই ছিল না। আওয়ামী লীগ নেতা, বিশেষ করে শেখবাড়ির নির্দেশ পালনই হয়ে ওঠে তার প্রধান কাজ। একটা সময় কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয় শেখ বাড়ি। শেখ বাড়ির আর্শীবাদের কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
২০২৩ সালের ১৯ মে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশ পন্ড করতে হামলা চালায় পুলিশ। ওইদিন লাঠিচার্জ ও শটগানের গুলিতে অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ রক্তাক্ত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১০ জনকে আটক করে। হমলার শিকার এক বিএনপি নেতা জানান, ওসি হাসান আল মামুন নিজে কনস্টেবলের কাছ থেকে শটগান নিয়ে গুলি করা শুরু করেন। পরে তার সঙ্গে অন্যরাও যোগ দেন।
২০২১ সালের ২২ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্œত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবিতে সমাবেশ ছিল বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। সকাল থেকে কাটাতারের বেড়া দিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশের পথ ঘিরে রাখে পুলিশ। বাঁধা সত্বেও বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ে হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশও শুরু হয়।
কিছু সময়ের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। তৎকালীন ওসি হাসান আল মামুন নিজেই লাঠি নিয়ে নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ সিনিয়র নেতাদের পেটান। বেদম পিটুনিতে অনেকের শরীর কেটে ও ফেটে যায়। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি নেতা শেখ জামিরুল ইসলাম জামিল, মেহেদী হাসান সোহাগ, হেদায়েত হোসেন হেদু, মোস্তফা ও জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২০২২ সালের ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচিতেও একইভাবে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ওইদিন ওসি হাসান আল মামুন নিজে বিএনপির ব্যানার টেনে ছিড়ে ফেলেন। বাঁধা দেওয়ায় লাঠি দিয়ে সিনিয়র নেতাদের পেটাতে থাকেন। ওই সময় মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলমের মাথা ও বাম চোখে আঘাত করেন মামুন। দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও চোখ বাঁচাতে পারেননি তিনি। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ফখরুল আলম ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট আদালতে মামলা করেন।
ভুক্তভোগী ফখরুল আলম বলেন, পুলিশের চাকরি করলেও হাসান আল মামুনের আচরণ ছিল আওয়ামী লীগের কর্মীর মতো। লাঠি দিয়ে মারধর করার সময় তিনি যেসব গালাগাল করতেন কোনো সভ্য মানুষ এসব মুখে আনতে পারে না। এদের মতো অফিসারদের কারণে মানুষ পুলিশকে ঘৃণা করে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
আরেক ভুক্তভোগী খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি হাসান আল মামুন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার প্রশ্রয়ে থানার অন্যান্য অফিসারও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার হওয়া উচিত। এই বিচার দেখে ভবিষ্যতে কোন পুলিশ যেন কাউকে কেনদিন অত্যাচার করার সাহস না করেন।
খুলনা গেজেট/হিমালয়