খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১১ মে, ২০২৪

Breaking News

  দিনাজপুরে ট্যাংক লরির চাপায় নিহত ২
  প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো আর নেই

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা

বেনাপোল প্রতিনিধি

বেনাপোল কাষ্টমস হাউস ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ও রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছর শেষে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৩৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এসময় ভারত থেকে পন্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। তবে অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতিতেছিল এই কাস্টমস হাউস। এরপর করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ রুটে ভারতের সাথে টানা আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণ নেমে আসে অর্ধেকে।
রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম এ বিষয়টি জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপর ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বেনাপোল কাস্টমস হাউজকে। এসময় অর্থবছর শেষে (জুলাই থেকে জুন) লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আদায় করে মাত্র ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এরআগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এবছরও ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন।
এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর ও কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, শুল্কফাঁকি ও পণ্য খালাসে হয়রানি রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ। রয়েছে বাণিজ্য তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মধ্যে পরস্পরের সমন্বয়ের অভাব। এতে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবার গতি ফিরবে বাণিজ্যে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, শুল্কফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, দেশে ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১৩ বন্দরের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দরের কাস্টমস হাউস। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এপথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৬০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজার মেট্রিক টন কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে বন্দরে ২৮টি পণ্যগার, ৮টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ১টি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড ও একটি ভারতীয় ট্রাক চ্যাচিজ টার্মিনালের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে এসব উন্নয়ন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাস্টমসে আমদানি পণ্য পরীক্ষণের নামে হয়রানি বেড়েছে। টাকা না দিলে নমুনা ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে চায়। পণ্য পরীক্ষণের ভালো ব্যবস্থা আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর থাকলে হয়রানি পোহাতে হতো না। ঝামেলা এড়াতে এ পথে আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অসৎ ব্যবসায়ীরা এ পথে মিথ্যা ঘোষণায় ভায়াগ্রার মতো মাদকের চালানও আমদানি করছেন।

ব্যবসায়ী আজিম উদ্দীন গাজি বলেন, ‘আমদানি পণ্য কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে। সেখানে ২/৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। আমদানি,রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার। এতেও লোকসানের কারণে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে সবাই ব্যবসা করতে আগ্রহী। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছে না। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।

আমদানি রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বার বার বন্দরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী। এখনো সাধারণ পণ্যগারে কেমিক্যাল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে বন্দরে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে ভয় পায়।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘এরইমধ্যে বেনাপোল বন্দরে অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়া আরও যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, জেলখানার মতো বন্দরের চারিদিকে প্রাচীর নির্মাণ ও নতুন জায়গা অধিগ্রহণ। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বেনাপোল বিশ্বের কাছে একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে, তখন আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব বাড়বে।’

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, করোনা প্রভাবের কারণে গেল বছরে রাজস্ব বেশি ঘাটতি হয়েছে। তবে পণ্য চালান খালাসে পূর্বের চেয়ে কাস্টমসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। শুল্কফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। শুল্কফাঁকির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

খুলনা গেজেট/এসআর/এআইএন




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!