করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নানা বিধিনিষেধের কারণে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত কমে গেছে। ফলে অনেকটা স্থবির হয়ে আছে চেকপোস্ট থেকে ভ্রমণ খাত ও বন্দর টার্মিনাল ফি থেকে অর্থ আদায়।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে যাত্রী যাতায়াত কমেছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৩ জন। এ সময় ভ্রমণ খাতে সরকারের রাজস্ব কমেছে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা ও বন্দরের পাসেজ্ঞার টার্মিনাল ফি বাবদ কমেছে ২ কোটি, ২১ লাখ ৮১ হাজার ২৬২ টাকা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর হয়ে প্রতি বছর স্বাভাবিক সময়ে ভারতের সঙ্গে ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন পণ্যের আমদানি হয়ে থাকে। পাশাপাশি চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা ও ভ্রমণ ভিসায় প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করে থাকেন। বাণিজ্য খাত থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। সেই সঙ্গে ভ্রমণ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হয় প্রায় ১০০ কোটি ও টার্মিনাল ফি বাবদ সাড়ে ৮ কোটি টাকার কাছাকাছি।
কিন্তু চলমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সতর্কতা বাড়িয়েছে ভারত। সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ ভ্রমণ ভিসার নিষেধাজ্ঞা এবং ২৬ মার্চ স্থলপথে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে চার মাস পর বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় ধীরে ধীরে বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভ্রমণ ভিসায় যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
চেকপোস্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে (১২-১৮ ফেব্রুয়ারি) বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৫ হাজার ৭৮৫ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ হাজার ১৪২ জন ও ভারত থেকে এসেছেন ২ হাজার ৬৪৩ জন।
বন্দরটি ব্যবহার করে ২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে ৯৭ হাজার ৬৫৩ টন। ২০২০ সালে ভারতে গেছেন ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১০৭ জন যাত্রী। ২০২১ সালে ভারতে গেছেন মাত্র ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭৪ জন। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশি বিদেশী যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে সরকারের রাজস্ব খাতে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভ্রমণকর বাবদ আদায় করা হয়। সেই সাথে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের খাতে টার্মিনাল ফি বাবদ ৪১.৪৫ পয়সা আদায় করা হয়। ফলে এ পথে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে যাত্রী যাতায়াত কমেছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৩ জন। এসব যাত্রী থেকে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব কমেছে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা ও বন্দরের টার্মিনাল ফি কমেছে ২ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ২৬২ টাকা।
ভারত ফেরত যাত্রী আমজাদ হোসেন জানান, দেশে চিকিৎসা সেবার ওপর ভরসা করা যায় না। অধিকাংশ চিকিৎসকরা রোগ ধরতে পারে না। ভুল চিকিৎসায় লাখ লাখ টাকা পানিতে যায়। দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতি হলে করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতে যেতে হতো না। এছাড়া দেশের টাকা দেশেই থাকত।
আরেক যাত্রী আমানুর রহমান জানান, সড়কপথে ভিসার আবেদন করলেও বিমানপথে ভিসা দিচ্ছে। আবার যাদের আগে সড়কপথের ভিসা রয়েছে, তাদেরও নানা অজুহাত দেখিয়ে ভ্রমণে বাধা দিচ্ছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন। খুব জরুরি দরকার থাকলেও ইচ্ছেমতো ভারতে যাওয়া যাচ্ছে না।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মনিটরিং অফিসার মেজবাউল হাসান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারত ফেরত সন্দেহভাজনদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত দুই মাসে ১৪০ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করার পর নয়জন পজিটিভ হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভারতে অবস্থানকালেও করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। আক্রান্তদের যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মদ রাজু বলেন, করোনা মহামারীর আগে স্বাভাবিক সময়ে এ পথে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ থাকায় যাত্রী যাতায়াত হাজারের নীচে নেমে এসেছে। ভারত থেকে ফিরতে ও ভারতে যাওয়ার সময় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর থেকে পরীক্ষা করা করোনা নেগেটিভ সনদ লাগছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বাণিজ্য। তবে ভ্রমণে এখনো নিষেধাজ্ঞা থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে যাত্রী যাতায়াত কমে যাচ্ছে। বর্তমানে মেডিকেল, বিজনেস ও শিক্ষা ভিসায় সীমিত সংখ্যায় যাত্রী যাতায়াত করছে। ভ্রমণ ভিসায় যাতায়াত এখনো বন্ধ রয়েছে। বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত দুই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই