আলোচনার পর বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দুদিন পর চালু হয়েছে আমদানি-রফতানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম। এর ফলে আজ সোমবার (৭ মার্চ) সকাল থেকে বন্দরে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।
বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃক বেনাপোলের দুটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে আমদানি-রফতানিসহ কাস্টমস ও বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ বন্দরের পণ্য লোড-আনলোড।
রোববার দফায় দফায় বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ফলপ্রসু আলোচনার পর তারা রোববার সন্ধ্যার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২ মার্চ) ভারত থেকে বন্ড লাইসেন্সের (শুল্ক মুক্ত) মাধ্যমে আমদানিকৃত ডেনিম ফেব্রিক্সের ট্রাকে করে আনা প্রায় অর্ধকোটি টাকার শাড়ি, থ্রিপিচ, বাংলা মদ, ফেনসিডিল, বিদেশি সিগারেট, ওষুধ, কারেন্ট জালসহ বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ভারতীয় ট্রাকসহ চালকদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
আমদানিকৃত ডেনিম ফেব্রিক্সের আমদানিকারক ছিল ঢাকাস্থ অনন্ত ডেনিম টেকনোলজি লিমিটেড ও ফ্যাশান ফোরাম লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
এ ঘটনায় বুধবার বেনাপোলের শিমুল ট্রেডিং এজেন্সি ও আইডিএস গ্রুপ নামে দুইটি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফের কর্মচারিদের নামেও মামলা করা হয় বেনাপোল পোর্ট থানায়। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সকালে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি এক যৌথ সভায় আমদানি-রপ্তানিসহ কাস্টমস ও বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। লাইন্সেস পুনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়।
রোববার (৬ মার্চ) সকালে বেনাপোল কাস্টমস হাউস মিলনায়তনে কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সার্বিক বিষয় নিয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া, উপ কমিশনার আহসানুল কবীরসহ কাস্টমসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা, সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমানসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে আরেক দফা আলোচনা শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন আন্দোলনকারীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, আমাদের সঙ্গে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম আগের মতো চলছে।
বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসু হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীরা তাদের কর্মবিরতি তুলে নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। দুই পক্ষ বসে সমস্যাগুলো সমাধান কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজের গতি বাড়ানোর জন্য কাস্টমসের সকল কর্মকতা, কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ এস আই