যশোরের মণিরামপুর উপজেলা এলাকায় চলাচলরত চুয়াত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধ মনোয়ারা বেগম এখন মৃত। জীবিত থেকেও সরকারি খাতায় গত ৫ বছর ধরে তাকে মৃত দেখানো হচ্ছে। মনোয়ারা বেগম উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলী স্ত্রী। বয়সের কারণে মনোয়ারা বেগম এখন লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। বসবাস করেন ছেলের বাড়িতে। আজও তার কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।
মণিরামপুর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মনোয়ারা বেগম মারা গেছেন। এমন তথ্য রয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিসে। সে হিসেবে গত ৫ বছর যাবৎ মনোয়ারা বেগম মৃত। সরকারি খাতায় মৃত থাকা কোনো ব্যক্তি বয়স্ক ভাতা পাবেন না। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মনোয়ারা বেগমের বয়স এখন ৭৪ বছর। ১৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান তার স্বামী ওয়াজেদ মোড়ল। সেই থেকে বড় ছেলে হাসান আলীর বাড়িতেই থাকেন তিনি।
মনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলের সংসারে থাকি। ওষুধ কিনতেও ছেলের কাছে হাত পাতা লাগে। বিধবা হইছি ১৫ বছর আগে। এত বয়স হইছে আমারে কেউ কিছু দেয় না। আমার মেয়ে রওশনারা বিধবা হয়েছে ২৫ বছর আগে। এখন পাটকলে কাজ করে, এবার তার একটি কার্ড হয়েছে। কিন্তু আমার কপালে আজও বয়স্ক ভাতার কার্ড জোটেনি। আমার জন্য কত জনের কাছে হাঁটিছি। সবাই শুধু ঠিক করে দেব বলে টাকা চায়।
প্রতিবেশি শরিফুল ইসলাম জানান, মনোয়ারা বেগম অনেক আগে ভাতা পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। তাঁর ভাতা আজও হলো না। আগের ইউনিয়ন পরিষদ মহিলা সদস্য এ বৃদ্ধার ভোটার কার্ড নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাতার কার্ড করে দেননি। পরে শুনেছি ভোটার আইডির নম্বর দিয়ে তথ্য যাচাই করার সময় বৃদ্ধাকে মৃত দেখাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তখন এই বৃদ্ধাকে মৃত দেখানো হয়েছিল। তিনি ২০১৭ সালে মারা গেছেন। সে হিসেবে বৃদ্ধার মৃত্যু তারিখ দেখানো হয় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। হালনাগাদ তথ্য নেয়ার সময় তখনকার স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ, মনোয়ারাকে মৃত শনাক্ত করে প্রত্যয়ন দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, মনোয়ারা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে তিনি মৃত। ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় শিক্ষকরা এ বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তথ্য দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত উপজেলার এমন ১০২ জনের তথ্য এসেছে, যারা এখনো বেঁচে আছেন কিন্তু ভোটার তালিকায় মৃত। তাঁদের সবার বিষয়টি যাচাইয়ের পর সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যে কোনো দিন আমার অফিসে আসলে বিষয়টি সংশোধন করে দেয়া হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করে আনলে বৃদ্ধাকে বয়স্ক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই