খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  যশোরে গরমে অসুস্থ হয়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু
  বান্দরবানের রুমা থানচি সীমান্তবর্তী এলাকায় দু’টি মরদেহ উদ্ধার
  দেশে আবারও ৭২ ঘন্টার হিট অ্যালার্ট জারি : আবহাওয়া অধিদপ্তর
  দুই আইনজীবির আদালত অবমাননার শুনানি পিছিয়ে ৩০ জুন : আপিল বিভাগ
  নির্বাচনে বিদেশি শক্তির প্রভাব অনুভব করেনি আওয়ামী লীগ : কাদের

বিনা’র বাদামে কৃষকের হাসি

বাপী দে

‘দিনের পর দিন ইট পুড়িয়ে মাটিতে কিছু ছিলনা। বছরের পর বছর কিছু হয়নি। সেখানে এতো সুন্দর বাদাম হবে ভাবতেই পারি নাই। খরচ-বরজ উঠেও ভাল লাভ থাকবে। নতুন বাদামের এই জাতে ওষুধ, বালাই নাশকেরও বেশী দরকার হয়নি। আমার ক্ষেত দেখে অনেক কৃষক বীজ চাইছেন।’

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা)’র নতুন উদ্ভাবিত বিনা চীনা বাদাম- ৮ চাষ নিয়ে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সোনাকুড় গ্রামের কৃষক কালাম মল্লিক।

শুধু চাষী কালাম মল্লিকই নন, উপজেলার সোনাকুড় গ্রামে ইট ভাটার পরিত্যক্ত ও পতিত প্রায় ৮ বিঘা জমিতে বিনা চীনা বাদাম-৮ চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। যেখানে বছরের পর কোন ফসল ফলতো না সেখানে নতুন প্রজাতির বাদাম গাছে বৃদ্ধি ও ভাল ফলনে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নতুন প্রজাতির বাদাম চাষে কৃষকদের সহযোগিতা দিয়েছে।

পতিত ও পরিত্যক্ত জমিতে চাষ

লবণাক্ত সহনশীল, উপকূলীয় এলাকায় চাষযোগ্য

হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২টন

একই গ্রামের চাষী রুহিদাস বিশ্বাস, কিংকর মন্ডল ও আমরাবাড়িয়া গ্রামের চঞ্চল ভৌমিক জানান, ইটভাটায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। কোন ফসলই হয়না। কিন্তু বিনা চীনা বাদাম চাষ করে আমরা নতুন আশা দেখছি। আগামী মৌসুমে এই এলাকায় আরো চাষের জমি বাড়বে। বাদামের দাম ভাল হওয়ায় সকলেই খুশী হয়েছি। কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তারা সব সময় আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাই নতুন ফসল চাষ করতে খুব সমস্যা হয়নি।

বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৯ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততার কারণে পতিত রয়েছে। দীর্ঘদিন এসব জমিতে কোন ফসল ফলছে না। এরমধ্যে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে নতুন প্রজাতির চীনা বাদাম চাষ সম্ভব। এক হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের গড় ফলন ২ টন এবং ৪৬ শতাংশ তেল থাকে। এমন অবস্থায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম উৎপাদিত দশ লাখ টন চীনাবাদাম থেকে ৪.৬ লাখ টন তেল পাওয়া যাবে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিনা চীনা বাদাম-৮ চাষের বিভিন্ন বৃদ্ধি পর্যায়ে প্রায় ৮-১০ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল হওয়ায় উপকূলীয় পতিত জমিতে চাষ সুবিধাজনক।

বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. বাবুল আকতার বলেন, বিনা চীনা বাদাম-৮ জাতটি উচ্চ ফলনশীল, লবণ সহিষ্ণু ও চাষাবাদ খরচ কম। ফলে উপকূলীয় এলাকার অনেক পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে। আমরা চলতি বছরে চীনা বাদাম চাষে কৃষকদের বীজ, সার ও কীটনাশকসহ প্রযোজনীয় সহায়তা দিয়েছি। ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নতুনভাবে অনেক চাষী এ প্রজাতির বাদাম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগামীতে কৃষক ও চাষের ক্ষেত্র আরো বাড়বে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘বিনা উদ্ভাবিত চীনা বাদাম-৮ চাষে কৃষক সাফল্য পেয়েছেন। এটি আমাদের কাজকে উৎসাহিত করবে। এই অঞ্চলের পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসতে যত বীজ সহায়তা প্রয়োজন, সেটি বিনার পক্ষ থেকে করা হবে।

খুলনার দিঘলিয়ায় বিনা উদ্ভাবিত চীনা বাদাম-৮ চাষ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আকতার। তিনি বলেন, পতিত জমিতে বিনা দাম-৮ এর চাষ করা খুবই ভালো উদ্যোগ। এ ধারাবাহিকতায় সকল পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হলে দেশের কৃষি আরো সমৃদ্ধশালী হবে।

খুলনা গেজেট/কেডি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!