যশোরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে জেলা পুলিশ প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে বাদ যাচ্ছে না জনপ্রতিনিধিরাও। ইতিমধ্যে জাহিদ হোসেন মিলন নামে একজন পৌর কাউন্সিলর বিদেশি মদসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। এরপর থেকে পুলিশি অভিযানের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন চিহিৃত কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত পুলিশের অপরাধী তালিকাভূক্ত জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশের কয়েকটি টিম। যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) বেলাল হুসাইনের অপসারণে দাবি জানানো পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। শুক্রবার রাতে যশোর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার, লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তাদের মানববন্ধন কর্মসূচিত না যাবার হুমকি দেন। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশ তার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছে।
এছাড়া, সকাল থেকে পুলিশের একাধিক টিম উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইনের অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। প্রথমে সংবাদ সম্মেলন প্রেসক্লাব যশোরে হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি ব্যাপক উপস্থিতির কারণে তা পরে সন্ধ্যায় পৌরসভার হলরুমে করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল, ১৮ ফেব্রুয়ারি দড়াটানায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরও তাদের অপসারণ করা না হলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যশোর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র শেখ মোকছিমুল বারী অপু।
উল্লেখ্য, যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলনসহ ৪ জনকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা রাতে পুলিশ খয়েরতলা মোড়ের তার অফিস থেকে দুই বোতল বিদেশি মদসহ আটক করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে ওয়াশ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিবাদে হঠাৎ করেই ফুঁসে ওঠে পৌরসভার কাউন্সিলররা। তারা মাদকসেবী অপরাধীর পক্ষ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ প্রশাসন ডিএসবির তালিকায় নাম থাকা ও হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সাথে যুক্ত জনপ্রতিনিধিদের আস্তানায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ কারণে শহরের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, যশোর পৌরসভায় কয়েকজন বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, এরা হলেন- জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, শাহেদ হোসেন নয়ন ওরফে শুটার নয়ন, সাহিদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন, আলমগীর কবীর সুমন ওরফে হাজী সুমন। এরাসহ ১৫টি ইউনিয়নের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশের অভিযানের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন বলেন, যশোরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। এক্ষেত্রে কোন জনপ্রতিনিধি বা কোন পদবিধারী বাদ যাবে না। তারা অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে এ অভিযান চালাচ্ছে। যাতে যশোরের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। আর এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তারাই পালন করে থাকেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা গেজেট/কেডি