খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ
চার দফা দাবিতে বিজেএ’র সংবাদ সম্মেলন আজ

বিদায়ী অর্থ বছরে কাঁচাপাট রপ্তানি বাড়লেও কমেছে আয়

মোহাম্মদ মিলন

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের তান্ডবে থমকে গেছে অর্থনীতির চাকা। এই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও দেশে বেড়েছে কাঁচাপাট রপ্তানি। বিদায়ী অর্থ বছরে প্রায় ৪০ হাজার বেল কাঁচা পাট রপ্তানি বেশি হয়েছে। তবে সেই তুলনায় কাঁচাপাট রপ্তানি আয় বাড়েনি। বরং তার আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছে রপ্তানি আয়। রপ্তানিকারকরা বলছেন, করোনায় পাটের মূল্য কমে যাওয়ায় রপ্তানি কিছুটা বেশি হয়েছে। তবে বিগত ৫ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি অনেক কম। কয়েক দফা পাট রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় রপ্তানি কমেছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, চার দফা দাবি জানিয়ে সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করবে বিজেএ। দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে-

  • কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ না করা এবং রপ্তানির উপর কোনরকম শুল্ক আরোপ না করা।
  • বার-বার রপ্তানি বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কাঁচাপাট রপ্তানিকারকদের ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ।
  • কাঁচাপাট রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানী সাবসিডি প্রদান।
  • করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ রপ্তানিখাতসমূহের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা সুবিধায় কাঁচাপাট রপ্তানীকারকদের অন্তর্ভূক্ত করা ।

বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন (বিজেএ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দেশের ৭২টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬৪ বেল কাঁচাপাট। আর এই পাট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৮৫৪ কোটি ৪০ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছিল ৮ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৯ বেল। এই পাট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৮৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। তবে এর আগের অর্থ বছরগুলোতে কাঁচাপাট রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে কাঁচাপাট রপ্তানি হয় ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৯০ বেল। এতে আয় হয়, ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১২ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৮ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছিল। এতে আয় হয়েছিল ১ হাজার ১৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৬২৮ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। এতে আয় হয় ১ হাজার ৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিগত ৫ অর্থ বছরে কাঁচা পাট রপ্তানির চিত্রে এমন তথ্য মিলেছে।

পাট রপ্তানিকারকরা বলছেন, করোনার কারণে পাটের মূল্য কমিয়ে দেওয়ায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের চেয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে পাট রপ্তানি বেড়েছে। তবে পাটের বিভিন্ন ধরণ ও মূল্যের পার্থক্য থাকায় রপ্তানির তুলনায় আয় কম হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বারবার কাঁচা পাট রপ্তানী বন্ধের কারনে পাট আমদানীকারক দেশের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন মাত্র ১৭ টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানী হচ্ছে। আগে প্রায় ৩০ টির মতো দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি হতো। ১৯৮৪-১৯৮৫, ২০০৯-২০১০, ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করায় পাটের বাজারে ধ্বস নামে। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমাদের ক্রয়কৃত মজুদ কাঁচাপাট রপ্তানি করতে না পারায় ক্রয়মূলের অর্ধেকের চেয়েও কম মূল্যে কাঁচা পাট বিক্রয় করতে হয়েছে। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি ও সর্বশান্ত হতে হয়েছে।

তারা বলছেন, এভাবে বার-বার কাঁচা পাট রপ্তানী ব্যহত হওয়ায় আমরা অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়েছি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে সারা দেশের শতাধিক ব্যবসায়ী এখনো ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেননি। সম্প্রতি একটি মহল দেশে কাঁচাপাটের সংকট দেখিয়ে কাঁচাপাট রপ্তানীর উপর প্রতি টনে ২৫০ মার্কিন ডলার রপ্তানী শুল্ক আরোপের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে এবং কাঁচাপাট রপ্তানী বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজেএ নেতারা বলছেন, চলতি অর্থ বছরে পাট অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এ বছর দেশে ৯২ দশমিক ৩৮ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতে পারে বলে প্রথমে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে বন্যার কারণে লক্ষমাত্রা ধরা হয় ৮৪ দশমিক ১৪ লাখ বেল। দেশের অভ্যন্তরীন কাঁচা পাটের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ বেল (সরকারী জুট মিলগুলাের চাদিা প্রায় ১৩ লাখ বেল এবং বেসরকারী জুট ও স্পিনিং মিলসমূহের চাহিদা প্রায় ৪২ লাখ বেল)। কিন্তু সরকারি জুট মিলগুলো বন্ধের কারণে তাদের প্রায় ১৩ লাখ বেল পাটের চাহিদা থাকছে না। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ কাঁচা পাটের চাহিদা এখন সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ বেল। বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি জুটমিলগুলো তাদের মজুদকৃত বিপুল পরিমান পুরাতন কাঁচাপাট তাদের নিজস্ব সরবরাহকারীদের পাওনা টাকার পরিবর্তে ফেরত দেয়ায় সেই পাটও বাজারে চলে আসবে। এরফলে এবছর প্রায় ৪০ লাখ বেল কাঁচাপাট উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। উদ্বৃত্ত পাট হতে আমরা প্রতি বছর মাত্র ৮-৯ লক্ষ বেল কাঁচাপাট বিদেশে রপ্তানি করে থাকি।

আকুঞ্জি ব্রাদার্সের মালিক হারুনার রশিদ বলেন, করোনার মধ্যে পাটের মূল্য কমে যায়, যে কারণে রপ্তানি কিছুটা বেশি হয়েছে। ক্ষতির আশঙ্কায় কম মূল্যে পাট রপ্তানি করতে হয়েছে। তিনি বলেন, একটি চক্র কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। এতে পাট রপ্তানির সাথে জড়িত অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেই সাথে বৈদেশিক আয়ও কমে যাবে। এসক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করবে বিজেএ।

বিজেএ’র চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী বলেন, রপ্তানি বন্ধের চক্রান্ত সফল হলে পাটের বাজারে ধ্বস নামবে এবং কোটি কোটি কৃষক পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আগামীতে পাট চাষে উৎসাহ হারাবে। এছাড়া কাঁচা পাট রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে। আর ব্যবসার ধারাবাহিকতা নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে যেটুকু কাঁচা পাটের আন্তর্জাতিক বাজার আছে, তাও আর থাকবে না।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!