পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির দিন আজ। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতিবিজড়িত দিন। ৪৯ বছর আগে এই দিনে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বাঙালির সামনে। সেদিন তারা স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। আর বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল বাঙালির। আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।
এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং আগামী বছর ২০২১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল, সেখানেও বাঙালিদের ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন। প্রথম আঘাত এসেছিল মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন বিশ্বে। ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা আছে তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। একাত্তর সালের ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পথ বেয়ে এসেছে বাঙালির বিজয়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে তার আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান।
দেশের বীর সন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রমনা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বিজয়ী বাঙালিরা। সেই পতাকা উঁচিয়ে চলছে প্রগতির পথে বাঙালির অভিযাত্রা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনার গল্লামারী স্মৃতিসৌধে অগণিত মানুষ নিবেদন করবে পুষ্পাঞ্জলি। মহানগরীসহ খুলনা জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবে বিজয় উৎসবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। খুলনাজুড়ে শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানাগুলোতে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
কর্মসূচি : প্রথম প্রহরে শহীদদের স্মরণে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। এ লক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি পালনের লক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সম্মুখে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উপাচার্য কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাতটার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাসহকারে অদম্য বাংলায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। ১১টার দিকে ওয়েবিনারে আলোচনা সভা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মাস্ক পরিধান করে উক্ত কর্মসূচিসমুহে খুবির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
‘মহান বিজয় দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার লক্ষে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের বাসভবন ও আবাসিক হলসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১০টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘দুর্বার বাংলা’-এর পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। ১১টার দিকে আলোচনা সভা (জুম-মাধ্যম), বাদ আছর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া-মাহফিল, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নাটক (জুম-মাধ্যম) প্রদর্শিত হবে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দিবসটি উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে সকাল সাতটার দিকে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সাড়ে সাতটার দিকে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। পরে দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, সকাল নয়টার দিকে বিজয় র্যালি। র্যালি শেষে দলীয় কার্যালয়ে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা। এসব কর্মসূচি রয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। সকাল সাতটার দিকে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও র্যালি। এছাড়া সকল দলীয় কার্যালয়ে সূর্যোদ্বয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা।
দিবসটি উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকাল ১১টার দিকে আলোচনা সভা হবে। অনুরূপ বাংলাদেশ বেতার খুলনা কার্যালয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
খুলনা গেজেট / এআর / এমএম