যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইস উদ্দিনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে দায়িত্ব পালনকালে বিএসএফের চালানো গুলিতে তিনি মারা যান। তার দুই বছরের শিশু রাইসা ও চার মাসের হাসান আলীকে নিয়ে মরদেহের অপেক্ষায় নির্বাক রয়েছেন পরিবার। শিশু সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও তারা দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।
যশোরে মৃতদেহ নিতে আসা রইস উদ্দিনের বন্ধু আ. মমিন বলেন, আট বছর আগে রইস বিজিবিতে চাকরি পাওয়ার পর এলাকার জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু তিনি নিজের জন্য কোন কিছুই করেননি। তার নেই কোনো বাড়ি বা সঞ্চয়। যা কিছু পেয়েছেন তা এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করেছেন। আর দুটি শিশুর ভবিষ্যত কি হবে তা তারা জানেন না। তিনি বলেন, কেন তার বন্ধুকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করাই কি তার অন্যায় ছিল?
নিহত রইস উদ্দিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত সাহাপাড়ার শ্যামপুর গ্রামে। কৃষক কামরুজ্জামানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন রইস। তার বড় ভাই সেনাবাহিনীতে এবং মেজ ভাই বিজিবিতে কর্মরত রয়েছেন।
বন্ধু মমিন বলেন, রইস উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে টিনের একটি একচালা ঘর রয়েছে। এ বাড়িতেই গ্রামবাসী এসে ভিড় করছেন। অনেকে আসছেন খোঁজ নিতে, মরদেহ এসেছে কি না। আবার অনেকে আসছেন নিহতের স্বজনদের সান্তনা দিতে।
তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই রইস বিপদগ্রস্তদের পাশে সব সময় দাঁড়িয়েছেন। আট বছর চাকরি করার পরও তার নেই কোনো সঞ্চয় বা একটি আশ্রয়স্থল। গ্রামের সবার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়লেও এখন তার পরিবারটি অসহায়। সর্বশেষ তিনি গ্রামে এসে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেন। পরে কয়েকটি জানালা বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তারমত একজন ভালো মানুষকে তারা হারালেন।
উল্লেখ্য, ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে চোরাকারবারিরা গরু নিয়ে আসছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরাকারবারিদের ধাওয়া করে। এসময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারি করার সময় চোরাকারবারিদের ধরতে গেলে সিপাহি রইস উদ্দিন ঘন কুয়াশায় দলছুট হয়ে সীমান্তে চলে যান, তখন বিএসএফ সদস্যদের চালানো গুলিতে তিনি আহত হন।
পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের বনগাঁ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন দুপুর ২টার দিকে মারা যান রইস।
বুধবার বেলা ১১টায় তার মরদেহ শার্শার শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ সদস্যরা হস্তান্তর করে। এরপর যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তার ময়না তদন্ত করা হয়। পরে মরদেহ দুপুর ২টায় যশোর ৪৯ বিজিবি দপ্তর প্রাঙ্গণে নাামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শেষে পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে বিজিবির একটি দল চাপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়।
খুলনা গেজেট/ টিএ