অভয়নগরে শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার ভৈরব নদের জমি চলে যাচ্ছে রাঘব বোয়াল দখল দারদের পেটে। পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ায় এবং দখলবাজদের দৌরাত্বে নদীর বাঁক বদলে যাওয়ায় জেগে উঠছে চর। আর এ চরে প্রতিনিয়ত আটকে যাচ্ছে কার্গো জাহাজ। ফলে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে নদী বন্দর অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর নওয়াপাড়া হারাতে যাচ্ছে তার ঐতিহ্য।
জানা গেছে, ভৈরব নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে নওয়াপাড়া নদী বন্দর। ভৈরব নদীকে উপজীব্য করেই গোড়াপত্তন হয়েছিলো নওয়াপাড়া নদী বন্দরের। যা পরবর্তীতে শিল্প-বাণিজ্য সমৃদ্ধ নগরীতে রূপান্তরিত হয়। যদিও শহরের রূপ যত বেড়েছে ততই সৌন্ধর্য হারিয়েছে ভৈরব নদ। যাকে ঘিরেই রূপবতী শিল্প-শহর নওয়াপাড়া সেই ভৈরব নদকেই আজ ধুঁকে ধুঁকে প্রহর গুনতে হচ্ছে মৃত্যুর। এভাবে দখলবাজদের পেটে বিলীন হতে থাকলে এক সময় নওয়াপাড়ার ভৈরব নদ মরা খালে পরিণত হবে। নওয়াপাড়া হারাবে বন্দরের ঐতিহ্য। থমকে যাবে শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার সমৃদ্ধির চাঁকা।
২০০৪ সালে নওয়াপাড়াকে নদী বন্দরের সীমানা উল্লেখপূর্বক গেজেট প্রকাশ করে সরকার। আর তারপরই চোখের পলকে যেন বদলে যেতে থাকে নওয়াপাড়ার চিত্র। এ বন্দর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, ব্যক্তি স্বার্থ ও দূরদর্শীতার অভাবে বন্দরের কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি বলে জানায় স্থানীয় সচেতন মহল।
ব্যবসায়ীমহল, সুধিজনেরা একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম করলেও বদলায়নি অতিলোভী গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর মনোভব। পরিবর্তন আসেনি বন্দর কর্তৃপক্ষের। একদিকে নাব্যতা সংকট ও অন্যদিকে দখলের কবলে প্রতিনিয়ত তার জৌলুস হারাচ্ছে। নদীর পাড়ে গোডাউন, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনার দখলে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে এই নদী।
ব্যবসায়ীদের দাবি, নদীর নাব্যতা আগের মত ফিরে আসুক। যাতে করে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি ঘটুক। এছাড়া বন্দরে পণ্য উঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আরও সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
এই বন্দরে প্রতিদিন মংলা ও চট্রগ্রাম থেকে ৩০ থেকে ৪০ টি পণ্য বোঝাই জাহাজ ওঠানো নামানো হয়। ঘাটে খালাসের অপেক্ষায় থাকে আরও ২শতাধিক জাহাজ।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, নদীর নাব্যতা সংকট দূর করতে না পারলে বন্দরের কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে না। বছরের পর বছর ধরে নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদ দখল করে চলেছে দখলবাজরা। ভৈরবের প্রায় অর্ধেক জমি চলে গেছে দখলবাজদের পেটে। এমনকি নদীর মাঝে বাঁধ দিয়েও দখল করা হয়েছে ভৈরব নদ। তবুও এসব রাঘববোয়াল দখলবাজরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। আর রাঘববোয়াল যাদের পেটে ভৈরব নদীর বৃহদাংশ হজম করে ফেলেছে সেই সব দখলবাজরা থেকে যান বহাল তবিয়তে। এসকল অবৈধ স্থাপনা ও দখল অজ্ঞাত কারণে উচ্ছেদ হয়না। এদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদ ড্রেজিং হয় যেনতেন ভাবে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় ভৈরব নদ ড্রেজিং না হওয়ায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। সেই সাথে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে পানির প্রবাহ। আর এ নামমাত্র ডেজিংও চলে দখলবাজদের সুবিধা মাথায় রেখে। ফলে দখলবাজদের কারণে নদীর বাঁক বদলে গেলেও তার সুরাহা হয়না।
নওয়াপাড়ার আমদানীকারক-ব্যবসায়ী ও ঘাট শ্রমিকরা জানান, অবিলম্বে ভৈরব নদ দখলমুক্ত করে সঠিক ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ভৈরব নদকে প্রবাহের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে শিল্প-বাণিজ্য ও ব্যবসা থমকে দাঁড়াবে। পথে বসবে হাজার হাজার পরিবার। সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। হাতে গোনা দুই/দশজন দখলবাজদের জন্য নওয়াপাড়া বন্দরের এত বড় বিপর্যয় কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
তারা নৌ-মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্থক্ষেপে এ সকল দখলবাজদের হাত থেকে ভৈরব নদকে রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নদের নাব্যতার কারণে চলতি মাসের প্রথম দিকে ভৈরব নদে ৬৮০ মেট্রিক টন সরকারি ইউরিয়া সার বোঝাই এমভি শারিব বাঁধন নামে কার্গো ডুবে যায়। এরপর থেকে উদ্ধার কাজের চেষ্টা অব্যহত থাকে। এরপর শনিবার (৫ মার্চ) দুপুরে ভৈরব নদে ১৩৫০ টন কয়লা বোঝাই ‘এমভি সুরাইয়া’ নামের একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। উপজেলার ভাটপাড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন ইকোপার্কের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে জাহাজের ১২ জন স্টাফই সাঁতরে পাড়ে উঠে আসেন। ডুবে যাওয়া কয়লার কারণে নদের পানি দূষণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে সরকার গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বলেন, বিআইডব্লিউটিএর অব্যবস্থাপনার কারণে নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীরা যে ভ্যাট দিয়ে থাকি তার ১০% কাজ যদি এ বন্দরে করা হত তাহলে বন্দরের চেহারা পাল্টে যেত।
নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক জানান, অল্প সময়ের মধ্যে নদী খনন না করলে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে।
নোয়াপাড়া ট্রের্ডাস এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জনি বলেন, নদীর নাব্যতার কারণে কার্গো গুলো ৬ ঘন্টা বসে থাকে। জোয়ার আসলে আবার শ্রমিকেরা কাজ করে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের জাহাজের ডেমারেজ গুনতে হয়। নাব্যতার কারণে প্রায় জাহাজের বাধা গ্রস্থ হয়ে থাকে। দ্রুত নদী খনন করতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও বন্দর রক্ষা কমিটির সাবেক নেতা আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল বলেন, বর্তমানে আমাদের এই ভৈরব নদী আর্শীবাদ না হয়ে এখন অভিশাপে পরিনত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ভৈরব নদীতে অব্যাহত ভাবে পলি পড়ে নদীর নাব্যতা সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে নদীর পাশের ঘাট গুলাতে এই নাব্যতা সংকট পলি অপসারণের জন্য আমাদের দুইটা ড্রেজার ও দুইটা এস্কোভেটর অব্যহত ভাবে কাজ করে চলছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই