বাগেরহাটে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও, ঝাজ বেড়েছে পেয়াজে। দুই-তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারে এ চিত্র দেখা যায়। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পেয়াজের দাম এত বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছে, মোকাম থেকে যে দামে কেনা হয়েছে, তার উপর সামান্য লাভ করে বিক্রি করা হয়। এখানে কোন সিন্ডিকেট নাই।
এদিকে আজ বিকেলে বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম গেল সপ্তাহের থেকে কিছুটা কমেছে। শীতকালীন সবজির পরিমানও বেড়েছে বাজারে। প্রতি কেজি সবজির দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। খুচরায় প্রতি কেজি পটল ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকা, বেগুন কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ১১০-১২০ টাকা, আলু ৬০, মুলা ৫৫-৬০, ঢেঁড়স ৩৫-৪০, জলপাই ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ২০০-২২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ১১০ টাকা, বাধাকপি ৭০ টাকা, কচু ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫-৬০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামও নাগালের বাইরে বলে দাবি বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষের।
বাজার করতে আসা মো. তাহের রনি বলেন, ১৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম । তিন দিন আগেও এই পেঁয়াজ ছিল ১১০ টাকা। রসুনেরও দাম বেড়েছে, ১৮০ টাকার রসুন কিনলাম ২৪০ টাকা। এভাবে বাড়লে আমরা কিভাবে বাঁচব।
সানি জুবায়ের নামের একজন বেসরকারি চাকুরিজীবী বলেন, মাস গেলে যে বেতন পাই, সেটা দিয়ে আমার জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাচ্চার স্কুল খরচ, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার, টিউশনি খরচ, মা-বাবার চিকিৎসা খরচ, বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল সব খরচ মেটাতে প্রতি মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার দেনায় পড়ছি। দ্রব্যমূল্য যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে, তাহলে জীবন চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
রহিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, চাল, মাছ, সবজি, মশলা এমন কোন পন্য নেই যার দাম বাড়েনি। তেলের দামও বেড়েছে অনেক। বাজারে কোন কিছুতেই সুবিধা নেই। আলু তাই কিনতে হয় ৬০ টাকায়, অথচ এক বছর আগেও এই সময়ে আমরা আলু কিনেছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। বছর দুয়েক আগেও সারা বছর আলুর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে থাকত বলে জানান এই নারী।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খুচরো সবজি বিক্রেতা বলেন, আসলে আমরা আড়ৎদারদের কাছ থেকে যেভাবে কিনি সেভাবে বিক্রি করি। দুইজন আড়ৎদ্বার এই বাজারে পেয়াজ ও আলু আমদানি করেন।তারা সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। পরিবহন ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যয় দিয়ে এবার ২২ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছেন বাগেরহাটের মজুদদ্বার ব্যবসায়ীরা। সেই আলু পাইকারি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরো বিক্রেতাদের কাছে। এসব মজুদদ্বারদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গা প্রয়োজন। তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে দাবি করেন তিনি।
কাঁচামাল ব্যবসায়ি হালিম খান বলেন, এই মাসের গত সপ্তাহে ও কাঁচা সবজির দাম বেশি ছিল। শীতকালীন সবজি বাজারে আসায় দাম কমেছে অনেক।
পিঁয়াজ আড়ৎদার বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী আব্দুস সত্তার হাওলাদার বলেন, ভারত থেকে পিঁয়াজ কম থাকার কারনে আগের থেকে দাম বেড়েছে। আমদানি বাড়লে দাম কমবে। এছাড়া দেশী পেয়াজের মোকামেও দাম বেড়েছে, ৪ হাজার টাকা মনের পেয়াজ এখন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে দাম বেড়েছে। আসলে এখানে কোন সিন্ডিকেট নাই।
বাগেরহাট ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছি। কোথাও অসংগতি ও অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এএজে