খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে : ইসি রাশেদা
  ময়মনসিংহে বাসের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

বসন্তপুর নৌ-বন্দর চালুর দাবি, পরিদর্শনে যাচ্ছেন জেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতে সময়ও লাগছে কম। এতে বেড়েছে ভোমরা স্থলবন্দরের গুরুত্ব। তবে সাতক্ষীরাবাসির দাবি পণ্য পরিবহন খরচ কমাতে ও ভোমরা বন্দরের উপর চাপ কমাতে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি আবারও চালু করার কোন বিকল্প নেই। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বেলা ১১ টায় প্রস্তাবিত বসন্তপুর নৌ-বন্দর পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

বসন্তপুর নৌ-বন্দর বিষয়ক সাব কমিটির আহবায়ক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন জানান, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি একটি পুরাতন নৌ-বন্দর। এই বন্দরটি সীমান্তের ইছামতী, কালিন্দি ও কাঁকশিয়ালী নদীর মোহনায় (ত্রিমোহিনী) অবস্থিত। ভারত সীমান্তে হিঙ্গলগঞ্জের সঙ্গে বসন্তপুরে নৌ-বন্দর চালু ছিল। এ বন্দরটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করতো। এ বন্দরে মথুরেশপুর ও ভাড়াসিমলা ইউনিয়ন ছাড়াও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালের দিকে বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, নৌ বন্দর টি পুনরায় চালু করার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি দিয়েছেন। নৌ-বন্দরটি পুনরায় চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসার পথ সুগম হবে। নৌ-পথে আমদানি-রপ্তানি পরিবহন খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি ব্যবহারে বেশী আগ্রহী হবেন। বন্দরটি চালু হলে সাতক্ষীরা জেলার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এই এরাকার উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। ফলে পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ রূপ প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা যুক্ত থাকতে পারবো।

বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, জাতির পিতার ভ্রাতা শেখ আবু নাসের ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সময় এই যায়গা দিয়ে ভারতে গমনাগমন করেন এবং অবস্থান করেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর সাতক্ষীরা জেলার ২২ লক্ষ মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে। বসন্তপুর নৌ-বন্দর চালু হলে সাতক্ষীরার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।

এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসন্তপুর এলাকা পরিদর্শণ করবেন। এসময় তারা স্থানীয় সকল পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন তারা।

এবিষয়ে কালিগঞ্জের বাসিন্দা বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান জানান, নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। রাজা প্রতাপাদিত্যের কাকাতো ভাই রাজা বসন্ত রায়ের নাম অনুসারে অধুনা কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামের নামকরণ করা হয়। অনুকুল পরিবেশের কারণে পাকিস্তানের শুরুতে এলাকার উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে তৎকালিন পাকিস্তান সরকার এ নৌবন্দরটি চালু করেন। ক্রমশঃ এ বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পর্যন্ত এ বন্দরের কার্যক্রম চালু ছিল। সেই সময় নৌ-পথ ব্যবহার করে শত শত মানুষ হান্ডলোড সিস্টেমের মাধ্যমে মালামাল নিয়ে এপার-ওপার যাতায়াত করতো। এ বন্দর দিয়ে আমদানী-রপ্তানি হতো বিভিন্ন প্রকার পোশাক, পিতল-কাসা, হাড়ি-পাতিল, ফল ফলাদি, মুদি সামগ্রী পেয়াজ, রসুন, মশলা এবং সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মাছ। সে সময় কাস্টমস ও ইমেগ্রেশন বিভাগের রমরমা কার্যক্রম থাকলেও পাক-ভারত যুদ্ধ শেষ না হতেই অনানুষ্ঠানিক ভাবে বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্দ হয়ে যায়। তবে শুল্ক বিভাগের কার্যক্রম আজো চালু আছে। চালু রয়েছে বসন্তপুর তহশীল অফিসটি। বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হলেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত নদীপথে মানুষ এপার-ওপার করতো। বর্তমানে সব কিছু বন্ধ রয়েছে।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ সাতক্ষীরার সহকারী কমিশনার আমির মামুন বলেন, বসন্তপুর নৌ-বন্দর চালু হলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বাণিজ্যিক স্বার্থে এটি ব্যবহার করবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, বসন্তপুর নৌ-বন্দরের গুরুত্ব বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে তিনি সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!