খুলনা-যশোর জাতীয় মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মহাসড়কটির রেলক্রস সংলগ্ন পশ্চিম দিকের সড়কটি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলসহ সড়কটিতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার এবং খুলনাগামী সিএনজি এবং অটো স্ট্যান্ড। রেল ক্রসিংয়ের পার হয়েই ডান দিকে ফুলবাড়িগেট বাজার এবং বামদিকে মহাসড়কের পাশেই অটো, সিএনজি এবং দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর বাসস্ট্যান্ড। সংগত কারণেই এলাকাটিতে দিবারাত্রি যানজট লেগেই থাকে। এরপর যানবাহন চালক এবং পথচারীদের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা রেল ক্রসিং।
রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান সূত্রে জানা যায়, দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টায় স্থানটি দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ বার ক্ষেত্রবিশেষ তারও বেশি বার যাত্রীবাহী, মালবাহী ট্রেনসহ ট্রেনের ইঞ্জিন আসা-যাওয়া করে থাকে। যাত্রীবাহী ট্রেন আসা যাওয়ার সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য সর্বনিম্ন ৩ মিনিট, মালবাহী ট্রেন ৪ মিনিট এবং ইঞ্জিনের জন্য ৩ মিনিট গেট বন্ধ রাখা হয়। ক্ষেত্রবিশেষ উক্ত সময়ের বেশিও গেট বন্ধ রাখা হয়।
সূত্রমতে, দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টায় সড়কটির রেলক্রসিংয়ের গেট ২ দুই ঘন্টার অধিক সময় বন্ধ থাকে। সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত রেলক্রস সংলগ্ন মহাসড়কটিতে যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচল থাকে খুবই বেশি। হিসাব করে দেখা যায় উক্ত সময়ের মধ্যে ১৪ বার যাত্রীবাহী ট্রেন, ৫ বার মালবাহী ট্রেন এবং ৩ বার ট্রেনের ইঞ্জিন (ক্ষেত্রবিশেষ কমবেশি) আসা যাওয়া করে। উপরের হিসেব অনুযায়ী সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা ব্যস্ততম সময়ে ২২ বার ট্রেন আসা যাওয়ার ফলে দায়িত্বরত গেটম্যানকে ৭১ মিনিট বা ১ ঘন্টা ১১ মিনিট গ্রেট বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবার ট্রেন আসা যাওয়ার সময় ৩-৪ মিনিট গেট বন্ধ রাখার ফলে মহা সড়কের উভয় পাশে প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতিবার ট্রেন আসা যাওয়ার পর সড়কটি যানজট মুক্ত হতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট (ক্ষেত্রবিশেষ তারও বেশি) সময় লেগে যায়। পিক আওয়ারে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টায় ২২ বার ট্রেন এবং ট্রেনের ইঞ্জিন আসা যাওয়ার ফলে যানবাহন চালক এবং যাত্রীদের ২২০ মিনিট বা ৩ ঘন্টা ৪০ মিনিট যানজটের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।
শুধু যানজট নয় এ সময়ের মধ্যে গুরুতর রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ গাড়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িগুলোকেও গুরুত্বপূর্ণ এ সময় অপচয় করতে হয়। শুধু তাই নয় সাধারণ যাত্রীদেরও গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রতিনিয়ত অপচয় করতে হচ্ছে এই স্থানটিতে। অপচয় হচ্ছে যানবাহনগুলোর জ্বালানি তেলের খরচ। খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি শহরের গুরুত্বপূর্ন ফুলবাড়িগেট রেলক্রসিংয়ে ওভার পাস/ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ২০২১ সালের প্রথমদিকে ’ফুলবাড়িগেট রেল ক্রসিং ওভার পাস নির্মাণ প্রকল্প ‘ নামে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও গত ২ বছরের অধিক সময় পার হলেও সেটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেডিএ কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া প্রায়শই কোন কারণে রেল লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে লাইন মেরামতের জন্য ৩-৪ ঘন্টা (ক্ষেত্রবিশেষ এর চেয়েও অধিক সময়) লেগে যায়। তখন এই দীর্ঘ সময়ে সড়কের উভয় পার্শ্বে অসহনীয় যানযটের সৃষ্টি হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম