মেহেদী হাসান ষ্টারলিং। ডাক নাম খোকা। মডার্ণ সী ফুডের মালিকের একমাত্র ছেলে। উচ্চাভিলাষী জীবন যাপনে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়। তার সমস্ত দায়ভার এসে পড়ে মডার্ণ সী ফুডের ফিন্যান্স অফিসার উজ্জল কুমার সাহার উপর। তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভাড়া করা হয় খুনীদের। আর তাদের হাতে খুন হয় ওই কর্মকর্তা। এ হত্যা মামলায় মডার্ণ সী ফুডের মালিক পুত্রসহ পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকান্ডের ঘটনা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে।
মামলার তথ্য অনুযায়ি, হত্যাকান্ডের মাস খানেক আগে উজ্জলকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করতে থাকে ষ্টারলিং ও তার খালাতো ভাই আরিফুল হক সজল। ষ্টারলিং মডার্ণ সী ফুডের ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। ষ্টারলিং এর বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি তার পিতা মডার্ণ সী ফুডের এমডি রেজাউল সাহেবের কাছে তুলে ধরতেন উজ্জল। যা নিয়ে পিতা ও পুত্রের সাথে বিরোধ লেগেই থাকত। একপর্যায়ে পিতা ও পুত্রের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ষ্টারলিংয়ের স্ত্রী স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এক সময়ে বিষয়টি আরও খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। পরে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে উজ্জলকে কোম্পানি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সজল আদালতে স্বীকারোক্তিতে জানায়, ঘটনার পাঁচ দিন আগে সজলকে ডাকে ষ্টারলিং। ষ্টারলিং বলে ‘‘উজ্জল খুব ঝামেলা করছে ওকে একটু শিক্ষা দে”। এরপরে সজলকে টুটপাড়া এলাকার রানার সাথে দেখা করতে বলে ষ্টারলিং। ২০১২ সালের ৬ জুন সকাল সাড়ে আটটার দিকে রানার সাথে দেখা হয় সজলের। রানা আলতাপোল লেনের রনির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সজলকে। এসময় রনি সজলকে ডালিমের মোবাইল নম্বর দেয়। পরে সাউথ সেন্ট্রাল রোডে ডালিমের সাথে দেখা করে সজল। চলে হত্যার পরিকল্পনা। সবকিছু ঠিকঠাক। ঘটনার দিন আগে থেকেই জোহরা খাতুন বিদ্যা নিকেতনের সামনে অবস্থান নেয় ডালিম গ্যাং। কিন্তু ডালিম উজ্জলকে চেনে না। ডালিমকে চিনিয়ে দেওয়ার এ দায়িত্ব পালন করে সজল। পরিকল্পনা অনুযায়ি সজল ও উজ্জল একসাথে চা পান করে।
চা চক্র শেষ করে উজ্জলের কাছ থেকে বিদায় নিতে রিক্সায় ওঠে সজল। এর পরপরই ডালিম গ্যাং উজ্জলের কাছে চলে আসে। ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে উজ্জলের মাথায় আঘাত করে। সজীব এবং রনিসহ আরও পাঁচজন উজ্জলকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থকে। পরে উজ্জল অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।
ভিকটিমকে মারার দৃশ্য রিক্সার পিছনের পর্দা উচু করে দেখতে থাকে সজল। ভিকটিম ফোন দিলে কেটে দেয় সজল। পরে ঘটনাস্থলের একজন সর্বশেষ কলের রেকর্ড থেকে সজলকে ফোন দিয়ে জানান যে উজ্জলের ওপর হামলা হয়েছে, বিষয়টি তার পরিবারকে জানানোর অনুরোধ করা হয়। নিহতের ভাইকে ফোন করে ঘটনাটি জানায় সজল। তার পরপরই সজল ষ্টারলিংকে ফোন করে বিষয়টি জানালে নির্বাক হয়ে পড়ে ষ্টারলিং।
ঘটনাটি শুনে নিহতের ভাই সুমন খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিয়ে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উজ্জলের মৃত্যু হয়। নিহতের সুরাতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে ছোট ভাই অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে কয়েকদিন পর এ হত্যাকান্ডের মূল মাষ্টার মাইন্ড মেহেদী হাসান ষ্টারলিংসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। মামলায় মোট ছয় জন আসামি হত্যাকান্ডে নিজেদের দায় ও অবস্থান ব্যাখ্যা করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই