খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু
  বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় আজ জরুরী সিন্ডিকেট সভা আহ্বান

প্রিয় নবীজি ও গ্রাম্য বেদুঈন

মুফতি সাআদ আহমাদ

মসজিদে নববীর প্রিয় প্রাঙ্গণ। প্রিয় নবীজি সাঃ ও মুমিনদের পছন্দের মিলনায়তন। সময় পেলেই চিরচেনা এই আঙ্গিনায় একত্রিত হন তারা। প্রিয় নবীজিকে ঘিরে সাহাবীদের বসে থাকা এখানের রোজকার চিত্র। নবীজির চেহারা পানে চেয়ে তার মুখনিশৃত বাণী হৃদয়ঙ্গম করা আর তা থেকে নিজেদের আত্মার খোরাক সংগ্রহ করা তাদের নিয়মিত কাজ।

প্রতিদিনের ন্যায় আজও দোজাহানের বাদশাহ তার মাটির সিংহাসন গ্রহণ করেছেন। চারপাশে ভিড় করতে শুরু করেছে তার ইশারায় জান কুরবানকারী সাহাবীরা। এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলো গ্রামের এক গায়ে খাটা সাধারণ মানুষ। আরব এই বেদুঈনের চেহারা আর বেশভূষায় সরলতার ছাপ স্পষ্ট। রোদে পোড়া চেহারার মাঝে বিশ্বস্ততার এক অপূর্ব ঝিলিক।

বেদুঈন বেচারা মসজিদে ঢুকেই এদিক সেদিক দেখছে। তার চাহুনিও বেশ কৌতুহলী। আসলে বেচারার পেসাবের বেগ পেয়েছিল খুব। তাই একটু নিরাপদ যায়গা অনুসন্ধান করছে। চারদিক দেখে খুব একটা সুবিধে করতে পারল না। অগত্যা মুসজিদের দেয়াল ঘেষেই কাপড় তুলে দাড়িয়ে গেল। অত শত না ভেবে নিজের কাজে মন দিল।

এই, এই কি করে রে…! কি করে!

ধর… ধর… বলে জোরে আওয়াজ করে তেড়ে আসছে কয়েক জন। বেচারা খুব ঘাবড়ে গেল। উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সে প্রস্তুত ছিল না মোটেও। লোকগুলো খুব ক্ষিপ্ত গতিতে এগিয়ে আসছে তার দিকে। কিন্তু ততক্ষণে পানি খানিকটা গড়িয়ে গেছে। মসজিদ দেয়ালসহ একদম ভিজে একাকার।

এই সব কিছু হয়ে গেছে কয়েক মূহুর্তেই। নবীজি সাঃ দেখলেন, বেদুঈন বেচারা লোকগুলির আচরণে হতবিহবল হয়ে পড়েছে। তার নিঃস্বতা দেখে নবী প্রাণে মমতার বাদল ভর করল। তিনি দূর থেকে হাক ছেড়ে উদ্ধ্যত লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।

এই থাম, থাম…

তাকে ছেড়ে দাও…. একদম বকাঝকা কর না…

নবীজির আওয়াজ উদ্ধ্যত লোকগুলির পায়ে শিকল টেনে দিল। সাথে সাথেই ঘুরে দাড়ালেন তারা। বেচারা বেদুঈন এবার নিশ্চিন্ত মনে আপন কাজে মননিবেশ করল। একদম কাজ সম্পূর্ণ করে তবেই ক্ষান্ত হল।

পেসাবরত অবস্থায় বাধাপ্রাপ্ত হলে কতটা অস্থিরতা অনুভব হয় তা কেবল ভূক্তভুগীই জানে। বেদুঈন বেচারার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি নিশ্চয়। তাই এখন সে বেশ স্বস্তি অনুভব করছে। প্রশান্তচিত্তে কাজ শেষ করতে পেরে সে খুব তৃপ্ত।
তবে উপস্থিত লোকরা ততক্ষণে রেগে অস্থির। পারলে চোখ দিয়েই গিলে খাবে তাকে। বেটা কাজটা করলো কি? মসজিদের মধ্যে পেসাব করে দিল। পাগল নাকি!

দূর থেকে প্রিয় নবীজি সাঃ সব অবলোকন করছেন। এবার হাতের ইশারায় বেদুঈনকে ডাকলেন। স্নেহে নিজের পাশে বসালেন। মমতার হাত বুলিয়ে দিলেন তার কেশ ও বদনে। তিনি তো রহমতের নবী। তিনি তো আর রাগ করতে পারেন না। মানুষ ভুল করবে আর তিনি শুধরে দিবেন। তাদের হয়ে রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। এজন্যেই তো তিনি রহমাতুলল্লিল আলামীন।

নবীজি তাকে বললেন, দেখ! এটাতো মসজিদ মহান আল্লাহর ঘর। এধরনের পেসাব ইত্যাদি ময়লা আবর্জনা দ্বারা তা নোংরা করা উচিত নয়। এখানে কেবল আল্লাহর জিকির, নামাজ ও কুরআন তেলওয়াত করতে হয়। একথা বলেই একগাল মুচকি হেসে বেচারাকে আস্বস্ত করলেন।

প্রিয় নবীজির কথাগুলি বেদুঈনের হৃদয় ছুয়ে গেল। তার স্নেহ মাখা আচরণ বেজায় মুগ্ধ করল তাকে। নিজের কৃতকর্মের কারণে লজ্জিত হল মনে মনে। কি কাজটা করলাম আমি। ছিঃ ছিঃ….

প্রিয় নবীজি সাঃ লক্ষ্য করলেন পেসাবের জায়গা থেকে খুব দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পানি দিয়ে পরিস্কার করা দরকার। তবে বেচারা বেদুঈনকে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে বলা হলে সে আরো লজ্জা পেতে পারে। এটা তাকে এক ধরণের শাস্তি দেওয়া হবে যা তার জন্য পিড়াদায়ক হতে পারে।

এদিকে উপস্থিত সাহাবীদের মুখের দিকেও তাকানোর উপায় নেই। বেদুঈনের কাজে তারাও বেজায় ক্রুদ্ধ। আল্লাহর ঘরের এমন অসম্মানে যে কোন মুমিনের হৃদয় মর্মাহত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এই নিয়ে আর মনক্ষুন্ন হয়ে কি লাভ!

নবীজি তাদেরকে কাছে ডাকলেন। মায়া ভরা কন্ঠে বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদেরকে মানুষের প্রতি নম্রতা ও সহজতা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। মানুষের সাথে কঠোরতা করার জন্যে তো প্রেরণ করেননি। যাও, পেসাবের যায়গায় এক বদনা পানি ঢেলে দিয়ে মসজিদ পরিস্কার করে দাও (সহিহ বুখারীর ৬১২৮ নং হাদিস অবলম্বনে)।

লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!