এ যেন দখল প্রক্রিয়ারই অভিনব আয়োজন! খুলনার পাইকগাছা পৌর শহর রক্ষার নামে ভরাটি অংশে শিবসা নদীর মাঝ বরাবর বাঁধ দিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে একদিকে বাঁধের কাজ চলছে অন্যদিকে খন্ড খন্ড করে দখল হয়ে গেছে বাঁধের ভেতরের অংশ। দখলদাররা বৈধ বাঁধের অবৈধ দখল নিয়ে শুরু করেছে মাছ চাষ। এ যেন দখল প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতেই পৌর কর্তৃপক্ষের যত আয়োজন।
পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র ঘেঁষে প্রবাহিত শিবসা নদী ভরাট হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সদরের শিববাটী ব্রীজ থেকে হাড়িয়া নদী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘে শিবসা ভরাট হয়েছে বেশ আগেই। যদিও শুরু থেকে চর ভরাটি জমি দখলে বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা নানা উপায়ে শুরু করে দখল প্রক্রিয়া। তবে দখল ঠেকাতে মাঝ পথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ভরাটি অংশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠে বনায়ন। এতে একদিকে যেমন দখল প্রক্রিয়ায় বাঁধ সাধে অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখে।
তবুও বন্ধ ছিলনা দখল প্রক্রিয়া। নিত্য নতুন নানান পদ্ধতিতে ক্রমশ ছোট ছোট অংশে শুরু হয় দখল প্রক্রিয়া। বাজার সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে বর্জ্য অপসারণেও পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সর্বশেষ ভাটায় ভরাটি অংশের কোথাও পানি না থাকলেও জোয়ারে নিম্নাংশের কোন কোন এলাকায় ঢুকে পড়ে নদীর উপচে পড়া পানি। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস আগেই শহর রক্ষা বাঁধের দাবির মুখে কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নদীর কূলে বাঁধ না দিয়ে অপরিকল্পিত উপায়ে শিবসা ব্রিজ থেকে থানা পর্যন্ত প্রায় ৯’শ মিটার নদীর মাঝ বরাবর এলাকা দিয়ে বাঁধ তুলেছে। এতে নদী সীমানার শত শত বিঘা জমি ঢুকে পড়ে বাঁধ অভ্যন্তরে। যদিও প্রথম থেকে এমন আশংকায় প্রশ্ন উঠে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আর বাঁধ পরবর্তী সেই আশংকায় ঘি ঢেলেছে দখলদাররা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ভূমি দখল চক্রের পক্ষে ইতোমধ্যে শহর রক্ষা বাঁধের অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ এলাকা খন্ড খন্ড করে বাঁধ দিয়ে অবৈধ দখলে নিয়েছে। অনেকেই আবার দখলে নিয়েই শুরু করেছেন মাছ চাষ। কেউ কেউ আবার ব্যাস্ত সময় পার করছেন স্থাপনা তৈরীতে। তাছাড়া শহর রক্ষায় বাঁধ স্থাপনে লবণ পানিতে তলিয়ে বনায়নের বহু গাছ মরে যাচ্ছে। নদী তীরে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে না আসলে বনায়নের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের আশংকা করছেন স্থানীয়দের কেউ কেউ।
এব্যাপরে পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক অধিকার ববাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এ্যড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে শহর রক্ষা বাঁধ দেয়ার নামে নদী দখল করা হচ্ছে। এক দিকে দ্রুত সময়ে নদী হারাচ্ছে নাব্যতা, অন্যদিকে বাঁধ দিয়ে দখল নেয়ায় সংকুচিত নদীর উপচে পড়া পানিতে গোটা পৌর এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশংকাসহ এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন এ নাগরিক নেতা।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র শেখ মাহবুবুর রহমান রঞ্জু বলেন, এটা সাময়িক বাঁধ। বাঁধ কেন্দ্রিক স্থায়ী নদী ভরাটি জমির দখলের সুযোগ নেই দাবি করে তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্টদের নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি তাদের বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তার।
এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, অবৈধভাবে সরকারী সম্পত্তি দখলের কোন সুযোগ নেই। দখলের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। এবাপারে তদন্তপূর্বক অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানিয়েছে তিনি।
খুলনা গেজেট / আ হ আ