খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১০ মে, ২০২৪

Breaking News

  খাদ্যের নিশ্চয়তা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী
  রাজধানীর ডেমরায় পাইলিংয়ের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
  টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পাঁচ ব্যাংককে দেওয়া চিঠি ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা : বাংলাদেশ ব্যাংক

গেজেট ডেস্ক

তারল্যসংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে লেনদেন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের নিয়মিত কাজ বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। তবে লেনদেন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

নির্ধারিত সময়ের (২৬ ডিসেম্বর) পর পরিস্থিতি কী হয়, সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ছেপেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল রোববার দুপুরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান। সংকটে থাকা পাঁচ ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। সব কটি ব্যাংকই চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন।

গত শুক্রবার একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি হিসাবে ঘাটতির কারণে এই পাঁচ ব্যাংকের লেনদেন সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক। বিষয়টি বারবার অবহিত করার পরও ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।

তাই বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ কর্মদিবস সময় বেঁধে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০ দিনের মধ্যে চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয় করা না হলে ক্লিয়ারিং বা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা থেকে ব্যাংকগুলোকে বিরত রাখা হবে। ফলে চেক ক্লিয়ারিং, অনলাইন অর্থ স্থানান্তর, এটিএম সেবাসহ তাদের বেশির ভাগ সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। এই ২০ কর্মদিবসের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মতিঝিল কার্যালয়ের ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট বিভাগে রক্ষিত আপনাদের চলতি হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন লেনদেন নিষ্পত্তি, যেমন চেক ক্লিয়ারিং সেবা (বিএসিপিএস), অনলাইন অর্থ স্থানান্তর (বিইএফটিএন), এটিএম ও ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে সেবা গ্রহণ (এনপিএসবি) ও তাৎক্ষণিক অর্থ স্থানান্তর (আরটিজিএস) সেবার লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে। আপনাদের চলতি হিসাবের স্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে চলতি হিসাবের স্থিতি দীর্ঘদিন যাবৎ ঋণাত্মক, যা স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ‘২৬ ডিসেম্বরের পর কী হবে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই সিদ্ধান্ত নেবে। মতিঝিল অফিসের চিঠিটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমন চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময় দিয়ে থাকে। এটা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা।’

মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় এ নিয়ে চিঠি দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত সমস্যার কারণে কিছু ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের ২২ শতাংশ পেয়েছে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো, আর ঋণের ২৬ শতাংশ দিচ্ছে তারা। পাশাপাশি প্রবাসী আয়ের ৪০ শতাংশ এসব ব্যাংক আনছে। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশের বেশি হলেও ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় গড় খেলাপি ৪ শতাংশের মধ্যে। কাঠামোগত সমস্যার কারণে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে কিছু তারল্য সমস্যা হয়েছে।

ইসলামি ধারার শুধু এই পাঁচ ব্যাংকই কেন সংকটে, এই প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, এগুলোর ব্যবসার ধরন একই রকম। আর সব ব্যাংক একই সময়ে সমস্যায় পড়বে, এটাও কোনো কথা না। আজকে যেই ব্যাংক ভালো, কাল সেটা খারাপ হতে পারে। আবার সংকটে পড়া ইস্টার্ণ ব্যাংক এখন ভালো ব্যাংকগুলোর একটি। ওরিয়েন্টাল ব্যাংককেও ঠিক করতে মূলধন বিনিয়োগ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের জন্য যখন যা প্রয়োজন, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই পাঁচ ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা
উপায়ে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়ে থাকে। এটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। মুদ্রানীতিতে টাকার সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এবারের নীতিতে ৩৪ হাজার কোটি টাকার সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্য আছে। ইতিমধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়েছে।

শুধুই কাঠামোগত নাকি এসব ব্যাংকে সুশাসনের সমস্যাও আছে, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, এর মধ্যে দুটি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক (ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি) নিয়োগ দেওয়া আছে। তাঁরা ব্যাংকগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

মুখপাত্র আরও জানান, এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। এরপর বহিস্থ চাপ থেকে বের হয়ে এলে সংকটে পড়া ব্যাংকের সুশাসন ফেরাতে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খুলনা গেজেট/ টিএ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!