সরকারি অর্থায়নে দু’বছরের মধ্যে খানজাহান আলী (রহ:) বিমান বন্দর নির্মাণ, অতি দ্রুত দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ ও সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশে সকল সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিসহ সড়ক পথে খুলনা-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-কৈলাশগঞ্জ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার বি-গ্রেড এশিয়ান হাইওয়ে তৈরি করাসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এমন দাবি উন্নয়ন কমিটির। রোববার(২৪ জুলাই) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, উন্নয়ন কমিটির মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আলী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পদ্মা সেতু ভিশন-২০৪১ অর্জনে মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। রূপসা-ভৈরব বিধৌত পলি মটিতে গড়ে উঠেছে খুলনা শহর। উপকূলের বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ এ জেলায় রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি। প্রাকৃতিভাবে গড়ে ওঠা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আঁচল জুড়ে গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। খুলনার প্রাকৃতিক এবং ভূ-রাজনীতির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সড়ক, রেল, নৌ এবং সমুদ্র পথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব। এই সমুদ্র বন্দর ও সুন্দরবনকে আবর্তিত করেই সমৃদ্ধ হচ্ছে খুলনা উপকূলের অর্থনীতি। যে জন্য খুলনা এবং মংলা অর্থনীতির হাব বা কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাব আর্থ-সামাজিক ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এখন প্রয়োজন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। মোংলা বন্দরের সুবিধা বৃদ্ধি পর্যটন ও কৃষি সেক্টরসহ সম্ভাবনার সকল দিকে এ অঞ্চলের মানুষের এখন ভাবনার বিষয়। বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতাসম্পন্ন জনবল তৈরি এখন সময়ের দাবি। এর মধ্যদিয়ে খুলনার উন্নয়নে কৃষি-শিল্প-পর্যটনসহ বিভিন্ন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব বলেও উন্নয়ন কমিটি মনে করে।
সংবাদ সম্মেলনে এ অঞ্চলের সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, মোংলা বন্দরকে গতিশীল করা এবং সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা মাথায় রেখে ১৯৯৬ সালে ২৭ জানুয়ারি রামপাল উপজেলার মোংলা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলী (রহ:) বিমান বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ৪৪ হেক্টর জমিতে আংশিক মাটি ভরাটের কাজ দিয়ে শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আরও ১৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে টাকা পরিশোধ করা হয়। সর্বমোট ১৯৪ হেক্টর জমি বিমান বন্দরের জন্য নির্ধারিত থাকলেও খুলনা বিভাগীয় শহর হিসেবে ২৭-২৮ বছরেও বিমান বন্দর চালু করা সম্ভব হয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণের পরে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে দ্রুততম সময়ে বিনিয়োগকারীদের যাতায়াতের বিমান বন্দর চালু এখন সময়ের দাবি।
খুলনায় এখনও পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এজন্যই সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের পাইপ লাইন বসাতে পারছে না। এ বিষয়ে উন্নয়ন কমিটি মনে করে, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে নিউজপ্রিন্ট, হার্ডবোর্ড মিল ও পাট শিল্প বন্ধ হয়েছে। ঐ সকল স্থানে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বহুমুখী পাটের ব্যবহারসহ সময়ের চাহিদা অনুযায়ী শিল্প কল-কারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হলে পদ্মা সেতুর সফলতা আসবে। দ্বিতীয়তঃ বন্ধকৃত খুলনা টেক্সটাইল মিলের ২৬ একর জমির উপর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, পরিবেশ সম্মত প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প গ্রহণ করে বিশাল এ জায়গাকে ব্যবহার উপযোগী করা উচিত বলেও সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে :
বন্ধকৃত টেক্সটাইল মিলের ২৬ একর জমির উপর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বাস্তব ভিত্তিক প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা। মুজগুন্নী পর্যটন শিল্পের জায়গায় হোটেল-মোটেল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেল সেতুকে কার্যকর করতে খুলনার সাথে রেল যোগাযোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। খুলনা-ফকিরহাট-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের চাপ কমাতে ফুলতলা থেকে নড়াইল ভাঙ্গা হয়ে মাওয়া সেতু পর্যন্ত ও ভৈরব সেতুর মাধ্যমে দিঘলিয়া-তেরখাদা-গোপালগঞ্জ হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা। মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আকরাম পয়েন্টে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা। মোংলা বন্দরের নৌ-পথ সচল রাখতে রূপসা, ভৈরব, পশুর নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করা। খুলনা-মোংলা-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা এবং রূপসা-ভৈরবের তীর ঘেষে রিভারভিউ পার্ক নির্মাণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান, সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ শেখ মোশাররফ হোসেন, সহ-সভাপতি শাহীন জামাল পন, অধ্যাপক মো: আবুল বাসার, মিনা আজিজুর রহমান, মো: মনিরুজ্জামান রহিম, মিজানুর রহমান জিয়া, মিজানুর রহমান বাবু, আরজুল ইসলাম আরজু, এড. শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ, রসু আক্তার, মোঃ খলিলুর রহমান, মফিদুল ইসলাম টুটুল, এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, রকিব উদ্দিন ফারাজী, মোঃ হায়দার আলী, ইসমাইল হোসেন বাবু, শেখ আব্দুর রাজ্জাক, আফজাল হোসেন রাজু, প্রমিতি দফাদার প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/ এস আই