নড়াইলের কালিয়ায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মনির শেখ ও তার ভাই কামাল শেখের বিরুদ্ধে চাঁচুড়ী বাজার সংলগ্ন খাল দখল করে স্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
নদী-খাল রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও খালের ওপর মার্কেট নির্মাণ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরপরও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্র জানায়, খালটি চিত্রা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে। খালটি চাঁচুড়ীর বিল থেকে চাঁচুড়ী বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাশাপাশি তিনটি চাঁচুড়ী,পুরুলিয়া ও পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রাম ও বিলের মধ্য দিয়ে এঁকে বেঁকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার লম্বা। এক সময় কৃষকের সেচকাজের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিল এই খাল। এখন আর সেচকাজের জন্য তেমন একটা ব্যবহার না হলেও জেলার সর্ববৃহৎ চাঁচুড়ী বিল ও পাটেশ্বরী বিলসহ চাঁচুড়ী বাজারের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ খালটি।
গত দুই সপ্তাহে চাঁচুড়ী বাজার অংশে খালটির ওপর (বিজিবি) সদস্য মনির শেখ ও কামাল শেখ নামের দুই ব্যক্তি পাকা মার্কেট তৈরি শুরু করেছেন।
এদিকে, চাঁচুড়ী বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) খাল দখল করে একের পর এক স্থাপনা তুললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব। বাজার সংলগ্ন খালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবনসহ অবৈধ স্থাপনা। ফলে জেলার অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু চাঁচুড়ী বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহমান খালটি নাব্যতা সংকট, অবৈধ দখল আর অপরিচ্ছন্নতার কারণে এখন নালায় পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুকনো মৌসুম হওয়ায় খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগে খালটির পাড় থেকে ভেতরের দিকে প্রায় ১৫/২০ ফুট পর্যন্ত গ্রেট ভিম দিয়ে কংক্রিটের পিলার ও ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য খালের প্রায় ২ শতাংশ জায়গা দখল করা হয়েছে।
নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, চিংড়ী ও সাদা মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি চাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁচুড়ী বাজারের পেরীফেরিভূক্ত ধাড়িয়াঘাটা মৌজার বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা ১ নং খাস খতিয়ানের ৬৮ নং দাগের ২ শতাংশ সরকারি খাস জমির সঙ্গে কৃষ্ণপুর মৌজার একই সরকারি খতিয়ানভূক্ত খাল শ্রেণীর জমি অবৈধভাবে দখল করে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পাকা বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করছেন দখলদাররা।
বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, চাঁচুড়ী বাজারের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথ খালটি। দখলের কারণে এটি অনেকটাই ছোট হয়ে এসেছে। এর মধ্যে মনির শেখ ও তার ভাই কামাল শেখের খালের ওপর পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যহত হবে। সরকারি খাল এভাবে দখল হলেও প্রশাসনের নজরদারি নেই। তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ কাজে বাধা দিতেও সাহস পাচ্ছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে খাল দখল করে ভবন নির্মাণের শুরুতেই এতে বাধা দেন পুরুলিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। এমনকি উপজেলা সহকারী কমিশনারকেও (ভূমি) অবহিত করা হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছেন প্রশাসন।
এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ এলাকার লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি।
এ ব্যাপারে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন,‘মার্কেট নির্মাণ করার জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওয়াতাধীন কি-না,তা খতিয়ে দেখে শিগগিরই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.জহুরুল ইসলাম বলেন,‘ সরকারি কোনো নিয়মনীতির বাইরে কোনো কাজ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সেখানে সরেজমিনে দেখা হবে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখলদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খাল বা জলাধার দখল করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে; খালের জমির মধ্যে যদি পাকা ঘর নির্মাণ হয়ে থাকে তা ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।’
তবে অনুমোদন ছাড়া মার্কেট নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে নানা যুক্তি দেখান অবৈধ দখলদাররা। একই প্রসঙ্গে মতামত জানতে বিজিবি সদস্য মনির শেখের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আরেক অভিযুক্ত তার সহোদর কামাল শেখ বলেন,‘খালের সঙ্গে লাগোয়া আগের দোকানঘরের উত্তরপাশের ওয়াল ছিল। খালের পানিতে বিল্ডিং ভেঙে পড়ে। সেই ওয়াল ভেঙ্গে পড়ার জন্য একটু ফাউন্ডেশন দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের নামে এই জায়গার সঠিক কাগজপত্র আছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই