ভাষার টান আর মনের আবেগে কোভিড-১৯ উপেক্ষিত করে স্বল্প পরিসরে হলেও প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে বাংলাদেশ-ভারত দু‘দেশের মধ্যে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দু‘দেশের সংসদ সদস্যসহ রাজনীতিবিদরা। সকাল সাড়ে দশটা সময় দুই দেশের সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় নেতা কর্মীরা উপস্থিত থেকে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তবে এবার কোন মিলন মেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
সকালে নিজ নিজ ভূ-খন্ডে অপেক্ষায় ছিলেন আয়োজকরা। তারপর সীমানা পেরিয়ে শূন্যরেখায় পা রাখেন দুই’দেশের প্রতিনিধি দল। অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে স্মরণ করেন ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের স্মরণে পুরো বিশ্ব আজ একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন মাতৃভাষার দিবস হিসেবে। এসময় তাদের মুখে ধব্বনিত হয় ”আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি”। পরে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে থেকে মিস্টি পাঠানো হয় দু‘দেশের জনগণের জন্য।
মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবার শুধু অস্থায়ী শহীদ মিনারে স্বল্প পরিসরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বেনাপোল ও পেট্রাপোলে কোন অনুষ্ঠান না হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে অতিথি, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ন্যোম্যান্সল্যান্ডে প্রবেশে সুযোগ পায়। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোল চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ডে পালিত হয় যৌথভাবে। এবারই ব্যতিক্রম করোনার কারণে।
এসময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোঃ আজিজুর রহমান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা, জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামূল হক মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক মো: নাসির উদ্দিন, যুবলীগের সভাপতি অহেদুজ্জামান অহিদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন ভূইয়া, ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ।
ভারতের পক্ষে ছিলেন পশ্চিবঙ্গের বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ রায়, বনগাঁ লোকসভার প্রাক্তন সংসদ শ্রীমত্তা মমতা ঠাকুর, তৃণমূলের জেলা সভাপতি আলোরানী সরকার, বনগাও পঞ্চায়েত প্রধান পরিতোষ বিশ্বাস প্রমুখ।
বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, পশ্চিবঙ্গের মাননীয় মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধোপ্যাধায় এর অনুপ্রেরণায় এর আগে আমরা এখানে বড় করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বনগাঁ পৌর সভা ও পঞ্চায়েত সমিতিসহ সকলকে সাথে নিয়ে এ অনুষ্ঠান করলেও করোনার কারণে এবার কোন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। মূখ্য মন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে একটা মনের সম্পর্ক সেই সম্পর্ক আরো অটুট হয়েছে। আমরা মনে করি না এপার বাংলা ওপার বাংলার সাথে কোন বিভেদ আছে।
সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, বলেন, ২০১১ সাল থেকে দু‘দেশের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে নোম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছি। প্রতিবারই আমরা আনন্দঘন ও উৎসবের মধ্য দিয়ে অনেক বড় করে আয়োজন করে থাকি। এবার সরকারি বিধি নিষেধের কারণে সেই অনুষ্ঠান করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে দু‘দেশের মধ্যে আবদ্ধ করতে সীমিত আকারে পালন করতে হয়েছে। নিজের ভাষার জন্য পৃথিবীর কোন দেশ রক্ত দেয়নি। এদেশের দামাল ছেলেরা নিজের ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে বিভক্ত করা হলেও ভাষাকে বিভক্ত করা যায়নি।
খুলনা গেজেট/ এস আই