খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ১৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  হল-মার্ক কেলেঙ্কারি: তানভীর-জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১
  পি কে হালদারের ১৩ সহযোগীর সাজা বাড়াতে হাইকোর্টে দুদকের আবেদন

নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপের বর্ষপূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ১৩ মার্চ, ২০২৩। ঠিক এক বছর আগে এ দিন নবনির্বাচিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশন আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে মুক্ত, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য এর বিভিন্ন স্টেকডোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। ১৩ মার্চ ২০২২ তারিখে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপের মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু হয়। পরে ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে সংলাপের আজ বর্ষপূর্তি। কিন্তু কি ফল হয়েছে এ সংলাপ করে? ইসি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে কতটুকু? স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ কি সুগম হয়েছে?

বিরোধী দলগুলোর অধিকাংশই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন চাইছে, আর সরকারি দল চাইছে বর্তমান সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে। এ বিরোধের জেরে রাজপথ উত্তপ্ত হচ্ছে। ইসির সংলাপ করে কি লাভ হল, সে প্রসঙ্গে আমরা প্রথম সংলাপে শিক্ষাবিদ হিসেবে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্্ইয়া আখতার-এর মুখোমুখি হয়ে তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করি।

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্্ইয়া আখতার – খুলনা গেজেট

খুলনা গেজেট : অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্্ইয়া আখতার আপনি একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ হিসেবে গত বছর ১৩ মার্চ ইসি আহুত যে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তার আজ বর্ষপূর্তি। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই। আপনি কি মনে করেন, এ সংলাপ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রেখেছে?

ড. আখতার : না আমি মনে করি না যে আমাদের সংলাপে যোগদান অর্থবহ হয়েছিল। আমি মনে করি, ইসি আহুত সংলাপটি ছিল লোক দেখানো। ইসি এজেন্ডা ঠিক করেই পদাসীন হয়েছিল এবং এখনও ইসি সে এজেন্ডা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। কারণ, ইসি যদি সংলাপকে গুরুত্ব দিতো তাহলে সংলাপে আমরা যে সকল গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছিলাম তা আমলে নেয়া হতো। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে ইসি আমাদের দেওয়া পরামর্শ আমলে নেয়নি।

খুলনা গেজেট : আপনাদের কোন পরামর্শ আমলে নেয়া হয়নি তা উল্লেখ করে আমাদের পাঠকদের জন্য একটু বলবেন কি?

অধ্যাপক আখতার : অনেক পরামর্শই আমলে নেওয়া হয়নি। উদাহরণসহ বললে প্রথমেই বলবো আমরা শিক্ষাবিদসহ অন্য স্টেকহোল্ডাররাও ইভিএমে সংসদ নির্বাচন না করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সংলাপে প্রদত্ত এ পরামর্শ উপেক্ষা করে ইসি এককভাবে অনধিক ১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইসি নিজেই যদি এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তাহলে আর আমাদের ডেকে সংলাপ করার কোনো দরকার ছিল কি?

খুলনা গেজেট : আপনি কি বলতে চাইছেন ইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেছে?

অধ্যাপক আখতার : অবশ্যই। শুধু ভুল করেছে বলবো না। জাতির সঙ্গে তামাশা করেছে। কারণ, মাননীয় সিইসি বলেছিলেন, যদি অধিকাংশ দল ইভিএমে নির্বাচন না চায় তাহলে ইসি ইভিএমে নির্বাচন করবে না। কিন্তু অধিকাংশ রাজনৈতিক দল না চাওয়া সত্বেও ইসি কোন অঘোষিত এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার ডিকটেশনে অনধিক ১৫০ আসনে সংসদ নির্বাচন করতে চাইলো সে বিষয়টি একটি অনুদ্ঘাটিত রহস্য হয়ে আছে। আবার এ জন্য তারা সরকারের কাছে যে আর্থিক বরাদ্দ চাইলো সে প্রস্তাব একনেকেই উঠলো না। এখন ইসি বলছে, পুরানো ইভিএম দিয়ে তারা ৫০ থেকে ৮০টি কনস্টিটিউএনসিতে নির্বাচন করবে। এর চেয়ে বড় মশকরা আর কি হতে পারে।

খুলনা গেজেট : এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলবেন কি?

অধ্যাপক আখতার : দেখুন, দুঃখ লাগে। ইসির কর্মকান্ডে আমি খুবই হতাশ। আমার মনে হয় না যে, দলীয় সরকারের অধীনে এ ইসি ভালো নির্বাচন করতে পারবে। অবশ্য দলীয় সরকারাধীনে নির্বাচন হলে সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলে লক্ষণদৃষ্টে মনে হচ্ছে না। ইসি আমাদের কোনো পরামর্শই শোনেনি। যেমন আমি জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে নির্বাচন বিষয়ে অধিকতর অভিজ্ঞ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং এবং অ্যাসিট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। ইসি তো সে পরামর্শও আমলে নেয়নি। আমার তো কোনো এজেন্ডা নেই। আমি তো খোলা মনে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও গণতন্ত্র এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে এমন পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু ইসি আমার কথা শোনেনি। আমার মনে হয় না, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে আলোচ্য সংলাপের কোনো গঠনমূলক প্রভাব পড়বে। আমরা যত ভালো পরামর্শ দেই না কেন, ইসি তার নিজস্ব এজেন্ডা থেকে নড়বে না। আমার সন্দেহ আছে এ ইসি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কিনা।

খুলনা গেজেট : আপনার ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদেরকে সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক আখতার : আপনাদেরকেও আমার মতামত গ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!