যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নে চন্দ্রপুর গ্রামের আতাই নদের চরে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের হাট। ৫২ বছর ধরে চলা এই হাটটিতে দিন দিন ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। সপ্তাহে প্রতি বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। নদী ভাঙ্গনের কারণে আজ ঐতিহ্যবাহী বাঁশের হাটটি নদীর ভূ’গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। তাই বাশেঁর হাটটিকে নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা ও একটি চান্দিনার দাবি করেন হাট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা আসেন এই বাঁশের হাটে। হাটে এসে তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাঁশ কেনাবেচা করেন। ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি ১৯৭১ সালে স্বল্প পরিসরে শুরু হয়। পরবর্তীতে দিনে দিনে হাটের পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই হাটটি এ অঞ্চলের বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নদীর তীরবর্তী ও প্রধান সড়কের সংলগ্ন হওয়ায় হাটটিতে পণ্য পরিবহনে সহজলভ্য হয় বলে, ক্রেতা ও বিক্রেতার অনেক সমাগম ঘটে। প্রতি হাটে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার বাঁশ বেচাকেনা হয়ে থাকে। বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি, পানের বরজ, খুঁটি, সবজি চাষের মাচা, নানা ধরণের আসবাব পত্র, বেড়াসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়। নদীর পাড়ে প্রথম দিকে ২ একর জমির উপর হাটটি শুরু হলেও বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের ফলে ৫০ শতকের উপর হাটটি টিকে আছে। এখানে শুধু হাটবারে বাঁশ ক্রয় বিক্রয় হয়। কেউ বাঁশ কিনতে ব্যস্ত, আবার কেউ ট্রলারে সাজাতে, কেউবা আঁটি বেঁধে নদীতে ভাসাতে ব্যস্ত, আবার কেউবা নসিমনে বা ভ্যানে বাঁশ সাজাতে ব্যস্ত। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ব্যবসায়ী এ হাটে বাঁশ কিনতে আসে।
যশোরের বসুন্দিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. সাবু খান বলেন, যশোর খুলনার একটা বৃহত্তম বাঁশের হাট। আমরা প্রতি হাটে অনেক টাকার কেনাবেচা করি। এই হাটে নিরাপত্তার ব্যবস্থা অনেক ভাল। তবে হাটটি নদী ভাঙ্গনে কারণে আমাদের বাঁশ রাখতে অনেক কষ্ট হয়।
খুলনা থেকে আসা ব্যবসায়ী মকবুল শেখ বলেন, আমি প্রতি হাটে ৪০০ থেকে ৫০০ বাঁশ কিনে নিয়ে দিঘলীয়া, মধুপুর, হাজীগ্রাম নিয়ে বিক্রয় করে থাকি।
খুলনার পাইকগাছা থেকে আসা ব্যবসায়ী জিহাদ হোসেন বলেন, এখান থেকে বাঁশ ক্রয় করে নৌকায় ভরে নিয়ে চালনা, মংলা, কালীনগর, চুতরখালী ইত্যাদি জায়গায় নিয়ে বিক্রয় করা হয়।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এই হাটে বিভিন্ন জাতের বাঁশ যেমন- তল্লা ,উলকো, জাবা ইত্যাদি বাঁশ ক্রয় বিক্রয় হয়।
চন্দ্রপুর বাঁশের হাট কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান খান বলেন, ১৯৭১ সালে এই বাঁশের হাটটি শুরু হয়। এখানে অনেক দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারি আসে। এই হাটে হাজার হাজার বাঁশ বেচাকেনা হয়। বর্তমানে হাটটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলেছে। সরকারের কাছে হাটটি মেরামতের সুব্যবস্থা ও ব্যাপারিদের থাকার জন্য একটি চান্দিনার দাবি জানান তিনি।
অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর বলেন, এই বাঁশের হাটের মাধ্যমে অভয়নগরসহ আশেপাশের অনেক উপজেলার মানুষ ব্যাপক উপকৃত হয়। সময়ের ব্যবধানে নদী ভাঙ্গনে এই হাট নদী গর্ভে বিলীন প্রায়। এমতাবস্থায় আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আহবান জানাবো, গাইড অল র্নিমাণের মাধ্যেমে হাটটিকে সংরক্ষণ করবার এবং এর পাশাপাশি চান্দিনা তৈরি ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব তা আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবো।
খুলনা গেজেট/এনএম