খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

নওয়াপাড়ায় ফুটপাত দখল করে ব্যবসা, পথচারীদের ভোগান্তি চরমে

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর

অভয়নগর উপজেলা নওয়াপাড়া পৌরসভার ব্যস্ততম ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। এতে পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। অপর দিকে সরু পথ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে না পারলে কোথাও অগ্নিসংযোগ ঘটলে বাজার ভস্মীভূত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ ফুটপাত দখলমুক্ত করার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

জানা গেছে, শিল্প ও বন্দর নগরীর কারণে নওয়াপাড়া বাজারের অধিকাংশ সড়কের ফুটপাত অবৈধভাবে দখলে রয়েছে। যে কারণে নওয়াপাড়া থেকে যানজট কোনভাবেই দুর হচ্ছেনা। এতে নাকাল হয়ে পড়েছে নগরবাসি।

সরেজমিনে, ফুটপাত পথচারীদের না কি হকারদের তা বুঝা বড়ই মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। চুড়িপট্টির ব্যবসায়ীরা দোকান বৃদ্ধি করতে করতে চলাচলের রাস্তা নেই বললেই চলে। কাসারি পট্টির ব্যবসায়ীদের সকল হাড়ি পাতিল চলাচলের রাস্তা উপর না রাখলে যেন বেচা-বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। সুপারিপট্টি, খৈল-ভূষি পট্টি, কাঁচা বাজারসহ সর্বত্রই যেন একই অবস্থা।

রবিউল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা জানান, নওয়াপাড়া বাজারের সকল মার্কেটের অবস্থা একই রকম। দোকানের পসরা সাজিয়ে রেখে মাত্র ৩ থেকে ৪ ফুট গলিতে পরিণত করেছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, নওয়াপাড়া বাজারে চলাচলের জন্য অনেকগুলো গলি পথ আছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যস্ততম গলি। যশোর-খুলনা মহাসড়কে যানজট থেকে রেহাই পেতে বিকল্প পথ হিসেবে জনগণ ওই সব গলি পথে যাতায়াত করেন। এক একটি গলি ১০ থেকে ১৬ ফিট পর্যন্ত চওড়া। কিন্তু দখলদারেরা গলি দখল করে দোকানের পসরা সাজিয়ে রেখে মাত্র ৩ থেকে ৪ ফুট গলিতে পরিণত করেছে। এতে করে বাজারে মালামাল নিয়ে ভ্যান রিক্সা ঢুকতে পারে না। কোথাও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারবে না।

সচেতন মহল জানান, যে কোন মার্কেটে খোলামেলা বাজার করার কোন সুযোগ নেই। বাজার কমিটির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ।

এদিকে নূরবাগ থেকে হাসপাতাল সড়কের বিশেষ করে রেল লাইনের আগের অংশে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা তাদের সামনের জায়গা উচ্চমূল্যে ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন প্রকার পণ্যের পসরা বসিয়েছেন। যে কারণে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের কোন উপায় নেই। ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী হকারদের কারবারে (ব্যবসায়ে) ফুটপাত ধরে হাটার মতো নেই। বেগ পেতে হয় সাধারন মানুষের চলাফেরায়। বাজারের ফুটপাত যেন এখন চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনিভাবে ফুটপাতগুলি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে এক শ্রেণীর চক্র। নওয়াপাড়া বাসির এই ভোগান্তি যেন শেষ হবার নয়।

সচেতন ব্যবসায়ীরা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার অবৈধ দখলকারী দোকানের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও ফুটপাতের হকাররা কর্ণপাত করে না, বেশির ভাগ সময়ই তারা দখল করে রাখে। কিছু কিছু দোকান রাস্তার উপর রীতি মতো স্থায়ীভাবে স্থাপনা গড়ছে। বিভিন্ন ধরনের ফলমুল, ফ্লেক্সিলোড, কাচা তরকারি, মাছ-মাংস, লেপ-তোষক, জুতা-স্যান্ডেলের পসরা সাজিয়ে ফুটপাত দখল করে বসে আছে তারা। এসব দোকানে আসা ক্রেতাদের ভীড় ঠেলে পথচারীদের কর্মস্থলে যেতে বেগ পেতে হয়।

গাড়ি চালকেরা বলেন, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ী। আমরা গাড়ি নিয়ে চলতে পারি না। একবার যদি যানজট লাগে তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। এতে পথচারীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। নওয়াপাড়া বাজারের স্বাধীনতা চত্তর, ক্লিনিক পাড়া, মডেল স্কুল রোড, সরকারি খাদ্য গুদামের সামনে, শংকরাপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে যেন যানজট লেগে থাকে সব সময়। অপরদিকে এসব জায়গায় হকাররা বসে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেদারচ্ছে।

বাজারে কেনাকাটা করতে আসা পথচারী কামাল হোসেন, পারুল বেগম, শরিফুল ইসলাম , বাবু মোল্যা, শহিদুল ইসলাম বলেন, চিপা গলির ভিতর দিয়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। গলিগুলো দখলমুক্ত হলে আমরা সাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারতাম।

ফুটপথ দখল করে দোকান ও ব্যবসা করেন এমন কিছু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উচ্চমহলকে ম্যানেজ করে ব্যবসা পরিচালনা করি। হাটের ইজারা নিয়েছেন একজন প্রভাবশালী লোক যে করণে আমাদের কিছুই করতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সাভির্সের নওয়াপাড়া স্টেশন কর্মকর্তা টিটব শিকদার জানান, আমরা অনেক বার গলি দখলমুক্ত করার জন্য বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি তানজিলা আখতার মহোদয়কে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এই মুহূর্তে যদি বাজারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে তাহলে বাজার ভস্মীভূত হবে।

এ বিষয়ে নওয়াপাড়া বাজার কমিটির কর্তৃপক্ষ জানান, পথচারীদের যাতায়াতের জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। এছাড়াও আমরা নিয়মিত উদ্ধার অভিযান অব্যহত রেখেছি। তবে মানুষের মাঝে সচেতনার অভাব রয়েছে। তাদেরকে যানজটের বিষয়ে সচেতন করতে হবে।

নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাস শান্ত বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে মাইকিং করে দোকানিদের ফুটপাত ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ফুটপাতের দোকান থেকে কোনও খাজনা আদায় করি না। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এক-দুই মাস পরপর অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করি। এটি আমাদের চলমান কর্মসূচী। জনগণের অসুবিধা করে আমরা কোনওভাবেই ফুটপাত দখল করে রাখতে দেব না। খুব শিগগিরই আবার আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন বলেন, বিষয়টি নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে পৌরসভার মেয়রের সাথে আলোচনা করে অবৈধ দখলকারী দোকানের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিং-এ আলোচনা হয়েছে। দ্রুত এ ব্যাপারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!