খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ
  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
বেড়িয়েে আসছে নিয়োগ বাণিজ্য

দুদকের মামলায় ফাঁসছেন যবিপ্রবির সাবেক ভিসি সাত্তার 

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের প্রাথমিক তদন্তে। উঠে এসেছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন যবিপ্রবির প্রথম ভিসি। ভিসির দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সূত্র জানায়, দুদকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেকশন অফিসার পদে নিয়োগে নজিরবিহীন কান্ড ঘটিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সহকারী পরিচালক’ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ওই পদে নিয়োগ দিয়েছেন ভিসি সাত্তার। বিজ্ঞপ্তির কোথাও ওই পদের তথ্য উল্লেখ করা ছিল না। এমনকি ওই পদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমতিও নেয়া হয়নি। তিনি পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বিভিন্ন অপকৌশল ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন, যার প্রমাণ মুছে যেতে পারেননি তিনি। নিয়োগপ্রাপ্ত আব্দুর রউফকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের পর তাকে উপপরিচালক করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।

বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে আব্দুর রউফের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বাছাই বোর্ড অবৈধভাবে তাকে প্রথমে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করে। পরে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে উপাচার্য আব্দুস সাত্তার উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাকে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রউফ অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ কারণে কর্মরত অবস্থায় তার পদোন্নতি ও সিলেকশন গ্রেডসহ বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় সাড়ে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন অবৈধ এবং সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গুরুতর এ অপরাধের প্রধান হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক কমিশন। শিগগিরই তাদের অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক আল-আমিন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক আল-আমিন বলেন, কমিশনে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এরপরের সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই।

অন্যদিকে, অনুমোদিত মামলার প্রধান অভিযুক্ত ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নিয়োগবিধি অনুসরণ করেই নিয়োগ দিয়েছি। রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে এই নিয়োগের বৈধ ক্ষমতা আমার ছিল। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। যাকে আমি নিয়োগ দিয়েছি, তিনি আমার পূর্বপরিচিত কিংবা কোনো আত্মীয় নন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আমি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছি। আগামী রোববার আমাকে দুদক সময় দিয়েছে। সেখানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধিসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উপস্থাপন করব। আশা করি আমি ন্যায় বিচার পাব।

বিশ্ববিদ্যালয় ও দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল আব্দুর রউফ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে আবেদন করেন। নিয়োগের জন্য গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট বাছাই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার। ওই বছরের ২২ আগস্ট মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই সময় আরও তিন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু কাউকে পাস করানো হয়নি।

এদিকে, বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে আব্দুর রউফের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বাছাই বোর্ড অবৈধভাবে তাকে প্রথমে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া চেষ্টা করা হয়। পরে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। রিজেন্ট বোর্ড সভাপতি হিসেবে সাবেক উপাচার্য আব্দুস সাত্তার উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাকে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ এর ৩২ ধারা লঙ্ঘন করে অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আব্দুর রউফকে অবৈধভাবে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসেবে নিয়োগ দেন। কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অদ্ভুতভাবে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ইউজিসির নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন উপাচার্য।

উল্লেখ্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০০১ এর ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে সুপারিশ করার জন্য এক বা একাধিক বাছাই বোর্ড থাকবে। বাছাই বোর্ড গঠন ও কার্য্যাবলি সংবিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। বাছাই বোর্ডের সুপারিশের সঙ্গে রিজেন্ট বোর্ড একমত না হলে বিষয়টি চ্যান্সেলরের নিকট প্রেরণ করতে হবে। এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এ নিয়োগের প্রতিটি ধাপে নিয়োগ নীতিমালার শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দুদক মনে করে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রউফ সেকশন অফিসার পদে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিলেকশন গ্রেডসহ বিভিন্ন সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে বিভাগীয় প্রার্থীর সুবিধা নিয়ে ২০১৪ সালে সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে এবং ২০২১ সালে উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অদ্যবধি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। ২০০৯ সালের অক্টোবর হতে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত তার বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা গ্রহণপূর্বক আত্মসাতের বিষয়টি অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় নিয়মিত মামলা রুজুর সুপারিশ করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। ওই সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার ও আব্দুর রউফকে আসামি করে মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন।

এদিকে, যবিপ্রবি সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষে এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এটি খুলনা বিভাগের চতুর্থ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে প্রথমবারের উপাচার্য নিযুক্ত হন অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!