খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, স্টেশন মস্টারসহ সাময়িক বরখাস্ত ৩
  এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়

দালালমুক্ত করতে গিয়ে চাপের মুখে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসর্পোট আফিসে। সম্প্রতি পাসর্পোট আফিসে দালালের দৌরাত্ব কমে যাওয়ায় সেবাগ্রহিতাদের ভোগান্তি কমেছে। পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম রুখতে এবং মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের কাঙ্খিত সেবা পেতে পারে সেজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নবাগত উপ পরিচালক। ফলে বদলে গেছে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান উপ-পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে য়োগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই অফিসকে দালালমুক্ত করা প্রচেষ্টা শুরু করেন। ফলে ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে শুরু করে অফিসের চেহারা ও সার্বিক কার্যক্রম। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরাবাসী এখন সেবা পাচ্ছেন নির্বিঘ্নে এবং সেই সাথে পাসপোর্ট অফিস এখন অনেকটা হলেও দালালমুক্ত। তিনি ইতিপূর্বে যশোরে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জনগণকে পাসপোর্ট সেবা দিয়েছেন।

উপ-পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে বর্তমানে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস এখন অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে এখন কোন ফাইল পেন্ডিং থাকে না। সময় পেলে তিনি নিজে ভবনের নিচে দাড়িয়ে থেকে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করেন। পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের কাছে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শোনেন। কোন স্টাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেন। উপ-পরিচালক সার্বক্ষণিক প্রতিটি টেবিলে গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কাজের নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।

সাতক্ষীরা শহরের পলাপোল এলাকায় প্রাণসায়ের খালপাড়ে অবস্থিত সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস। ২০১৪ সাল থেকে নিজস্ব ভবনে এখানে কার্যক্রম শুরু করে অফিসটি।

জানা যায়, সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসর্পোট আফিসে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ জন সেবাপ্রত্যাশীর সমাগম ঘটে পাসর্পোট জমা ও সংগ্রহের জন্য। সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে (২০২৩) সরকার সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট আফিস থেকে রাজস্ব আদায় করেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখন প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি আবেদন জমা পড়ছে। প্রতিদিন প্রায় একই পরিমাণ পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর ফেরদৌসি ইসলাম মিষ্টি জানান, তার দুই ছেলের কিডনি রোগে ভুগছে। ভারতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলেন সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু পুরাতন পাসপোর্টের সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কিছুটা ভুল থাকায় তিনি ছেলেদের পাসপোর্ট করতে পারছিলেন না। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেক টাকাও নষ্ট করেছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এভাবে দুই মাস বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।

উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বর্তমান উপ পরিচালকের সাথে কথা বলেন। সমস্যা সমাধান করে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তার দুই ছেলের পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেন বর্তমান উপপরিচালক মেহেদী হাসান।

সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমান সময়ে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে। তিনি অফিসে নাগরিক সেবা বৃদ্ধির পাশাপাশি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার কাজে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে কিছু দালাল। বর্তমান উপ-পরিচালক সকল প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ও আপোষহীন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু দালাল অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।

দালালদের হুমকি প্রসঙ্গে উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, আমি সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ও আপোষহীন।অফিসে আসা নাগরিকদের সেবা প্রদানই আমার মূল লক্ষ্য। সেবারমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে অফিসে হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। অসুস্থ, মুক্তিযোদ্ধা, মহিলাদের জন্য আলাদা কাউন্টারের ব্যবস্থা রয়েছে। আবেদনকারীদের সুবিধার্থে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার রুমে প্রতিদিনই গণশুনানির ব্যবস্থা রয়েছে। কোন আবেদনকারী তার রুমে গেলে তিনি ওই পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা কম্পিউটারে দেখিয়ে দেওয়ার পাশাপশি এবং কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কর্মস্থলে সেবারমান বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিপূর্বে জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ট কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের চিত্র বর্তমানে সম্পূর্ণরুপে সেবাধর্মী। তারা বলেন উপ-পরিচালক নিজে নিচে কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা নেন। অর্থাৎ বর্তমানে পাসপোর্ট সেবা তিনি আবেদনকারীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!