খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দিলো তুরস্ক

দক্ষিণের বাতাসে বাঁধ ভেঙে পানিতে ভাসিয়ে নেয় সবকিছু

নিতিশ সানা, কয়রা

নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধ উপচে পানি আসছিলো, তখন আমরা সবাই মিলে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ বাতাস দক্ষিণ দিক থেকে শুরু হলে ১০ মিনিটের মধ্যে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে যায়। তলিয়ে যায় ঘর বাড়িসহ মাছের ঘের।

এভাবে বলছিলেন দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের ফেরদৌস গাজী (৫৫)। তিনি ২০ বিঘা জমিতে চিংড়ি মাছের চাষ করতেন।

প্রতি বিঘা জমি ৭ হাজার টাকা করে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায় লিচ নিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার চিংড়ি মাছের পোনা ছেড়ে মাছ চাষ শুরু করেন। তবে বছরের প্রথমে তার মাছ মারা গেলে। নতুন করে ২৪ হাজার টাকার পোনা মাছ ছেড়ে মাছ চাষ শুরু করেন, তখন ১ লক্ষ টাকার বেচাকেনা করেন। তার জমির হারির টাকা এখনো তুলতে পারেনি। তার ভিতর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ঘর বাড়িসহ মাছের ঘের।

এলাকাবাসী সেচ্চাশ্রমের মাধ্যমে রিংবাঁধ নির্মাণ করলে ২০ হাজার টাকায় নতুন করে ঘের প্রস্তুত করে ১৪ হাজার টাকার মাছ ছাড়েন এর বিতর কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবারও রিংবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব কিছু।

সাত হাজার টাকাই প্রতি বিঘা জমি লিচ নিয়ে অন্যের কাছ থেকে ১৫ বিঘা জমি ১ লাখ ৫ হাজার টসকা দিয়ে লিচ নিয়ে চিংড়ি মাছের চাষ শুরু করেন দিন মজুর হাসান সরদার। কিন্তু গত ১৭ জুলাই কপোতাক্ষ নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাটির টানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় তার মাছের ঘেরসহ বাড়ি-ঘর। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রিংবাঁধ নির্মাণ করলে নতুন করে আবার চিংড়ি চাষের উপযোগি করে তোলেন তার ঘের। ১৪ হাজার টাকা খরচ করে আবার চিংড়ি মাছের পোনা ছাড়েন। তবে রোববার (১৪ আগস্ট) আবারও কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সেই রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

নেছার আলী ৩ বিঘা জমি ৭ হাজার টাকা করে ২১ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে বাগদা চিংড়ি মাছের চাষ করেন। গত জুলাই মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে সব তলিয়ে যায়। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হলে আবার মাছের ঘের প্রস্তুত করে নতুন করে মাছ চাষ শুরু করেন। তবে ১৪ আগস্ট আবার সেই রিংবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে ২০০৯ সালে প্রকৃতিক দূর্যোগ ঘুর্ণিঝড় আইলার এই বাঁধ ভেঙে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তখন তার গরু ছাগল হাস মুরগি সব কহছু জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। তখন তিনি নদীতে মাছ ধর ছিলেন।

পাউবোর প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রথম বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর রিংবাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি মজবুত করা যায়নি। সেখানে জাইকার কাজ চলোমান থাকায় আর একটা নতুন প্রকল্প শুরু করতে একটু সময় লেগেছে তার ভিতর নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। জোয়ার-ভাটার কারণে বেশি সময় কাজ করা যায় না। এ কারণেই মূলত বাঁধটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপাতত পানি প্রবেশ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর রিং বাঁধ মজবুতের চেষ্টা করা হবে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধ ভেঙে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে চাল, ডাল, তেল, চিড়া শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরামুখা গ্রামে ১৪ আগস্ট শনিবার দুপুরের কপোতাক্ষ নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্থায়ী রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে ১৭ জুলাই রবিবার ভাটির টানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে স্থানীয়রা সেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রিংবাঁধ নির্মাণ করেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!