পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে যশোরের লক্ষাধিক পরিবার কমদামে টিসিবির মালামাল পেয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলাব্যাপী এসব মালামাল প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে গরীব পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। যা পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মণিরামপুর উপজেলায় পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯১৪ পরিবার ও সবচেয়ে কম পেয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলায় ১০ হাজার ৫১টি পরিবার।
সরকার দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এনে কম দামে টিসিবি পণ্য বিক্রি ব্যবস্থা চালু করে। বাজার দরের তুলনায় কম দামে নিত্যপ্রয়েজনীয় বিভিন্ন মালামাল টিসিবি’র ট্রাক থেকে মানুষ কিনতে পেরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছিল। কিন্তু এসব মালামাল বিক্রিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকায় নানা রকম জটিলতা হচ্ছিল। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে পরবর্তীতে সরকার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা তৈরি করে কার্ডের ব্যবস্থা করে। জেলা প্রশাসন গোটা এ প্রক্রিয়ার তত্বাবধান করে। গত মার্চ মাস থেকে যশোরে কার্ডের মাধ্যমে কম দামে টিসিবির মালামাল কিনতে পারে গরীব মানুষেরা। প্রথম পর্যায়ে এ বিক্রি শেষ হয় গত ৩০ মার্চ। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে টিসিবি মালামাল বিক্রি শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল থেকে। রমজান ও ঈদের ৫৬০ টাকার এ প্যাকেজে ছিল ২ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি ছোলা ও ২ লিটার তেল। গত ২০ এপ্রিল এ প্যাকেজের শেষ হয়। এসময়ে যশোরের আটটি উপজেলা ও পৌরসভা এলাকার এক লাখ ২০ হাজার ৯৮৩টি পরিবারের মাঝে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। অনেকটা কম দামে এসব মালামাল কিনতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তবে দ্বিতীয দফায় মালামাল বিক্রর সময় টিসিবি ডিলররা ক্রেতাদের কাছ থেকে তাদের কার্ড নিয়ে নিয়েছে। বলা হয়েছে, এ কার্ডের কার্যকারিতা আপাতত শেষ হয়েছে। ক্রেতা ও তাদের মালামালের হিসেব সম্পন্ন করার জন্য কার্ডগুলো তারা ক্রেতাদের কাছ নিয়ে নিয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ও শেষ পর্যায়ে যশোর সদর উপজেলা এলাকার ১৭ হাজার ৫১০টি পরিবার টিসিবির মালামাল কিনতে পেরেছেন। শার্শা উপজেলা এলাকায় কিনেছেন ১৪ হাজার ৮৫৭ পরিবার, ঝিকরগাছায় ১০ হাজার ৫১, চৌগাছা উপজেলায় ১০ হাজার ৯৫৭, বাঘারপাড়ায় ১০ হাজার ৪৭৭, অভয়নগরে ১১ হাজার ৪১৬, মণিরামপুরে ১৮ হাজার ৯১৪, কেশবপুরে ১৪ হাজার ৪৪৫ পরিবার টিসিবি পণ্য কেনার সুবিধা পেয়েছেন। এরমধ্যে যশোর পৌরসভা এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ১২ হাজার ৩৫৬টি পরিবার টিসিবি পণ্য সুবিধার আওতায় এসেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এসব মালামাল গত ৭, ৯, ১০, ১২, ১৬, ১৯ ও ২০ এপ্রিল সাতদিনব্যাপী বিক্রি করা হয়। যশোরসহ আটটি উপজেলাব্যাপী টিসিবি ডিলাররা ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে এসব মালামাল বিক্রি করেন।
সূত্র জানায়, নতুন নিয়মে বিতরণের দিনে শুধুযমাত্র কার্ডধারীদের মাঝে টিসিবি মালামাল বিক্রি করা হয়। নির্ধারিত দিনে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ বিক্রির কর্যক্রম সংশ্লিষ্ট স্থানে চলে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ডধারীরা ওইস্থানে এসে মালামাল না কিনলে বেলা ৩টার পর লাইনে দাড়িয়ে থাকা নন কার্ডধারীদের মাঝে নির্ধারিত মালামাল বিক্রি করে দেয়া হয় বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অনুপস্থিতির সুযোগে নন কার্ডধারীরা কম দামে মালামাল কেনার সুবিধা পেয়েছে। এতে অনির্ধারিত ব্যক্তিরাও সরকারি এ সুযোগের আওতায় আসছেন।
এ ব্যাপারে টিসিবি পণ্য বিক্রির তত্ত্ববধানকারী যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী টিসিবি পণ্য বিক্রির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এসময়ে যশোরের লক্ষাধিক নিম্ন আয়ের পরিবার কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল কিনতে পেরেছেন। মালামাল বিক্রির সময় ডিলাররা ক্রেতাদের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে নিয়েছেন। আগামীতে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরুর আগেই ক্রেতাদের ফের নতুন কার্ড প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।