খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  আজ খুলছে সব স্কুল-কলেজ
  রাতভর জ্বলছে সুন্দরবন, দেড় কি.মি. এলাকাজুড়ে আগুন

টানা কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নামছে বিএনপি

গেজেট ডেস্ক

ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলনকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। রমজান ও ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মাঠে নামছে দলটি। সরকার পতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে নেওয়া হচ্ছে ধারাবাহিক কর্মসূচি। সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার প্রস্তুতি চলছে। ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত মাসব্যাপী জেলাভিত্তিক এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। ঈদের পর রাজধানীকেন্দ্রিক এক দফার কর্মসূচি দেবে তারা। এসব কর্মসূচির ‘ওয়ার্মআপ’ হিসেবে আজ শনিবার ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করবে রাজপথের বিরোধী দলটি। এখান থেকেই সারাদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চান নেতাকর্মীরা। সমাবেশ সফল করতে কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতি সভা, কর্মিসভা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। আজকের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ২টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, আন্দোলনে যাঁরা অংশীদার আছেন, শরিক দলগুলো আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছেন। শিগগির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে অচিরেই জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটাবে।

জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে ‘অলআউট’ মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে দলটি। তাদের মতামত নিয়ে আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করছেন বিএনপির হাইকমান্ড। চলমান আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সমর্থন আদায়ে যেমন কৌশল রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই কূটনৈতিক মহলে দৌড়ঝাঁপ চলছে। অন্যদিকে, আন্দোলন চলাকালে নেতাকর্মীকে আইনি সহায়তা দিতে, সমর্থন জোগাতে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

দলসমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। গত বুধবারও সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই দিন দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও সভা হয়। সেখানে দু-এক দিনের মধ্যে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কোন্দল নিরসন করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

দলটির নেতারা জানান, এবারের আন্দোলনকে তাঁরা নিজেদের অস্তিত্ব, বাঁচা-মরার সঙ্গে তুলনা করছেন। তাই যখনই মাঠে নামবেন, তখনই পূর্ণ শক্তি নিয়ে আন্দোলন সফল করতে চাইবেন। সরকারের কোনো প্রলোভন কিংবা উস্কানিতে না পড়ে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামতে চান। এতদিন যে প্রক্রিয়ায় আন্দোলনকে একেবারে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন, সেভাবে চূড়ান্ত আন্দোলনেও সফলতা চান তাঁরা। এর অংশ হিসেবে ২০ মে থেকে পুরোদমে মাঠে নামবে বিএনপি ও যুগপথের মিত্ররা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে এবার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। ঢাকা অভিমুখে চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আবারও নেতাকর্মীর মধ্যে চাঙ্গা ভাব ফিরিয়ে আনতে, সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা আগের চেয়ে বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো এসব জেলা সমাবেশ করতে চায় বিএনপি ও মিত্ররা।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি শনিবার ১০ বিভাগের একাধিক জেলায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি সমাবেশে সাংগঠনিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সব জেলা থেকে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে ফের শোডাউন করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তবে এ কর্মসূচি নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে। প্রতি সপ্তাহে একযোগে বিভাগের একাধিক জেলায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলে স্থানীয় নেতাকর্মীর ওপর চাপ বাড়বে। সমাবেশের মতো কর্মযজ্ঞ আয়োজনেও হিমশিম খেতে হবে বলে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে দলের ৮২ সাংগঠনিক জেলাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান।

গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ১৯ জেলায় সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পরে বুধবার রাতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। সেখানে বেশির ভাগ নেতাই সব জেলায় সমাবেশ করার পক্ষে মত দেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক জেলাগুলোতে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

দলটির নেতারা জানান, ঈদুল আজহার আগে জেলা পর্যায়ে শোডাউনের কর্মসূচি শেষ করে ঢাকামুখী কর্মসূচিতে যেতে চায় দলের হাইকমান্ড। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ঘেরাও, ঢাকামুখী রোড মার্চ, ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে। তবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে এখনই না যাওয়ার পক্ষে দলের নীতিনির্ধারক নেতারা অবস্থান নিলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিনক্ষণ নিয়ে নীতিনির্ধারকরা নানা হিসাব করছেন।

নয়াপল্টনে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি

রমজানের ঈদের পর ১৫ দিনের বেশি সময় পর কর্মসূচি নিয়ে আজ ঢাকার রাজপথে নামছে বিএনপি। মাঠে নামার ঘোষণায় চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীর মধ্যে। নয়াপল্টনে এ সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। ঢাকা মহানগরী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মী, সমর্থক আর সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল। চলছে প্রচার-প্রচারণা। নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, তাঁরা যে কোনো সময়ের যে কোনো কর্মসূচির জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন। ঈদ-পরবর্তী শ্রমিক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও মানুষের ঢল নেমেছিল। আজ বিএনপির সমাবেশে সরকার পরিবর্তনের যে আওয়াজ উঠবে, তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!