খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব, প্রথম ১০ দিনের ফজিলত!

সৈয়দ আবদাল আহমেদ

জিলহজ্জ মাস সমাগত ( ২২ বা ২৩ জুলাই ২০২০)। মুসলমানদের জন্য এ মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন এ মাসে মুসলিমগণ হজ পালন করেন। এ মাসের ৭-১০ তারিখ পর্যন্ত হজ পালনের নির্ধারিত তারিখ। জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ মুসলিমদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আজহা বা কুরবানীর ঈদ।

জিলহজ্জ মাস শুরু হওয়ার আগেই শারীরিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা অর্থাৎ চুল,গোঁফ, হাত-পায়ের নোখ ও লোম পরিষ্কার করা উত্তম। চাঁদ দেখার পর যারা কোরবানি করার ইচ্ছা করবেন তাদের চুল,গোঁফ, নখ ও লোম পরিষ্কার করা শরিয়তে নিষেধ করা আছে। তাই জিলহজ্জ মাস শুরুর আগেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার জু’মার খুৎবায় কা’বা শরীফের খতীব ও ইমাম শাইখ ড.হুসাইন আলে শায়খ বলেছেন,”জিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ মওসুম। সফল তো সেই ব্যক্তি যে বিভিন্ন সৎকর্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে এই মওসুমকে মূল্যায়ন করেন। সৌভাগ্যবান তো সেই ব্যক্তি যে এ সময় যাবতীয় নেক আমলের প্রতিযোগিতা করে।
মহান আল্লাহ বলেন,’যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্হানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে ( সূরা হজ,আয়াত ২৮)।
আর সে দিনগুলো হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন। ইবনে আব্বাস এবং ইবনে উমর ( রা,) সহ আরো অনেক সালাফ এমনটি বলেছেন।

স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা এ দিনগুলোর শপথ করেছেন যা এই মওসুমটির মর্যাদা ও বিশাল ফজিলতের প্রমান বহন করে। মহান আল্লাহ বলেন,’শপথ ফজরের,শপথ দশ রাতের ( সূরা ফাজর,আায়াত ১-২)। মুফাসসিরগণের মতে, এখানে দশ রাত বলতে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ রাতকে বুঝানো হয়েছে। ইবাদতের জন্য জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনকে শ্রেষ্ঠ সময় ধরা হয়।” ( খুৎবার মূল অংশটুকু)।

জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর দু’আ করা খুবই সওয়াবের। এ মাসের শুরু থেকে ৯ জিলহজ্জ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) সিয়াম বা রোজা পালন করতেন। যারা হজে যাবেন না,তারা জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ যেটা আরাফা দিবস রয়েছে, তা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি মনে করেন, ওই ৯ দিনই রোজা পালন করবেন,তাহলে তো খুবই উত্তম।
নবী করীম (সা.) বলেছেন,”জিলহজ্জ মাসের ১০ দিনের আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল। এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের চেয়েও বেশি প্রিয় আমল।”
চাঁদ ওঠার পর ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে রোজা পালন করা,রাতে বেশি বেশি ইবাদাত করা উচিত। নফল নামাজ,কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল,দু’আ-দরূদ, তাওবা-ইস্তিগফার ইত্যাদি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। শুধু ঈদের দিন রোজা রাখা যাবে না।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,”জিলহজ্জ মাসের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্যদিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো। আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো ( তিরমিজি খন্ড-১,পৃষ্ঠা ১৫৮)।” “আরাফাতের দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ্জ নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত আমল। তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবেদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়।”

হযরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আরাফার দিনে রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তা’য়ালা এই রোজাদারদের বিগত এক বছরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন” ( তিরমিজি খন্ড-১,পৃষ্ঠা ১৫৭)।

বর্ণনায় এসেছে সাহাবাদের জিজ্ঞাসায়,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,”সর্বোত্তম দু’আ হচ্ছে আরাফার দিনে দু’আ করা। আমি এবং পূর্ববর্তী নবীগণ এ দিন উত্তম যে দোয়াটি পড়তাম তা হচ্ছে –“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু,লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা জিলহজ মাসের এই দিনগুলোতে অধিক হারে তাকবীর,তাহলীল ও তাহমীদ পাঠ করো”(মুসনাদে আহমাদ)।

তাহলীল হলো- লা ইলাহা ইল্লাহ, তাকবীর- আল্লাহু আকবার এবং তাহমীদ- আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করো (মুসনাদে আহমাদ,৬১৫৪)।”
৯ জিলহজ্জের ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জের আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব ( ইলাউস সুনান,খন্ড-৮,পৃষ্ঠা ১৪৮)। আর তা হচ্ছে — “আল্লাহু আকবার, আল্লাহ আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”

আগেই উল্লেখ করেছি, জিলহজ্জ মাস হজের মাস। আরবি বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জিলক্বদ, জিলহজ্জ, মহররম ও রজব। এ মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হজ সম্পাদন সুবিদিত মাসসমূহ। অতপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজের প্রস্তুতি ও নিয়ম কানুন মেনে হজ করার নিয়ত করবে। হজের সময় স্ত্রী সহবাস,অন্যায় ও দুরব্যবহার করা এবং ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকবে। তোমরা যে সৎকর্ম করো আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা বাকারা, ১৯৭)।

ঈদ উল আজহা ও কোরবানি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আস(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,”আমার প্রতি আজহার দিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ্জ ঈদ পালন করার আদেশ দেয়া হয়েছে যা আল্লাহর এই উম্মতের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।” তখন এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন,হে আল্লাহর রাসুল সা. আপনি বলুন,যদি আমার কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য না থাকে কিন্ত আমার কাছে একটি উট বা বকরি থাকে, যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি, আমি কি তা কোরবানি করতে পারি? জবাবে রাসুল সা. বললেন, “না। বরং তুমি তোমার মাথার চুল,নখ,গোঁফ কেটে ফেলো এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করো। এ-ই আল্লাহর নিকট তোমার কোরবানি” ( আবু দাউদ, নাসাই,ত্বহাবি খন্ড ২,পৃষ্ঠা ৩০৫)।
জিলহজ্জের ১০,১১,১২ যেকোনো দিন কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব ( ইবনে মাজাহ)।

হযরত জায়েদ ইবনে আকরাম (রা.) বর্ণনা করেন,সাহাবাগণ বললেন,হে আল্লাহর রাসুল সা. কোরবানি কি? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন,”তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নত।” তারা পুনরায় বললেন,তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে নবী করীম ( সা.) বললেন,”কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে।” তারা আবার প্রশ্ন করলেন,ভেড়ার লোমের কি হুকুম? জবাবে রাসুল সা. বললেন,”এটা তো গনণা করা সম্ভব নয়। তবে ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি সওয়াব রয়েছে।”( ইবনে মাজাহ )।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,”যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্তেও কোরবানি করল না,সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটও না আসে” ( ইবনে মাজাহ)। মহান আল্লাহ আমাদের জিলহজ্জ মাসের নেক আমলগুলো করার তৌফিক দিন, আমীন।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!