জলবদ্ধতা থেকে রেহাই পেতে এক সময় স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন পাইকগাছা বাকাচরের ১০ সহস্রাধিক মানুষ। দাবি ছিল কপোতাক্ষ নদ খননের। নিজেদের জমি-জমা, বাড়িঘরের বিনিময়ে সেই কপোতাক্ষ খনন হয়েছে। মরা কপোতাক্ষে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরেছে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে। বরং অপরিকল্পিত খননে সর্বশান্ত হতে চলেছেন ওই এলাকার কৃষি নির্ভর মানুষেরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কপোতাক্ষের পাশে থাকা বিল, চরের খালগুলো খনন ও নদের সঙ্গে সংযোগ না করায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিল ও চরের পানি অপসারণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অসময়ের বৃষ্টিতে প্রায় সাড়ে ৭০০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে,ভেসে গেছে মাছ। চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষেও অনিশ্চয়তা দেখা দিযেছে।
অবশ্য দ্রুত কপোতাক্ষের সঙ্গে খালগুলো খনন ও সংযোগ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
সাতক্ষীরা জেলা সংলগ্ন ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কৃষিনির্ভর গ্রাম বাকা। কতোপাক্ষ তীরের এই এলাকায় ১০ হাজারের বেশী মানুষের বসবাস। আবারও জলাবদ্ধতায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর ২০২০ সালের জুলাই থেকে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা নদটি খনন করে। তবে খননকালে বাকা ও আশপাশের বিলের সঙ্গে নদের সংযোগ স্থাপন করায় এসব এলাকায় স্থায়ী জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে ঘের, ঘেরের পাড় ও জমিতে সবজি চাষ করেন বাকা গ্রামের বাসিন্দা মো. নূর ইসলাম গাজী (৪৫)। বাকা বাজারে চাহিদার সিংহভাগই ছিল এই কৃষকের উৎপাদিত সবজি। কিন্তু আকষ্মিক বৃষ্টি ও জলবদ্ধতায় পথে বসতে চলেছেন নূর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পানি নামানোর কোন ব্যবস্থা থাকলে এমন পরিস্থিতে পরতে হতো না। এই সময় আমাদের সব ঘেরের পাড়ে সবজি থাকতো। এবার এখানে কৃষকদের কোটি টাকার সবজি ও মাছ নষ্ট হয়ে গেছে।’
এক একর জমির মালিক একই গ্রামের মুকুল খান (৪৪) বলেন, ‘এই সময় সব ঘের ও জমিতে লাউ, কুমড়া, বরবটি, সিমে ভরা থাকতো। কতোপাক্ষ খননের সময় আমাদের অনেক জমি, বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হয়েছে। ভেবেছিলাম জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচবো। কিন্তু এখনতো আরো মরতে বসেছি।’
গৃহবধূ রোমেচা বেগম (৫৩) ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘গাঙ কাইটে কী লাভ হইছে। সেই বুইরে (ডুবে) মরছি। নদীর সাথে খালগুলা কাইটে দিলে আমরা বাঁইচে যাতাম।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, পাইকগাছার বাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কপোতাক্ষের সঙ্গে খালগুলোর সংযোগ স্থাপন করলে এ সমস্যা আর থাকবে না।
খুলনা গেজেট/এইচ/এএজে