খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

নির্মা‌ণের দু'বছ‌রেই নষ্ট কয়রার ওড়াতলা স্লুইস‌ গেট

জলাবদ্ধতায় ক্রমাগত ফসলহানি, আমন চা‌ষে আগ্রহ হারা‌চ্ছে কৃষকরা

ত‌রিকুল ইস‌লাম

খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ওড়াতলা স্লুইসগেট নষ্টের ফ‌লে পাঁচ সহাস্রা‌ধিক বিঘা জ‌মির পা‌নি নিষ্কাশন ব‌্যাপক সমস‌্যা হয়। ফ‌লে পার্শ্ববর্তী ক‌য়েক‌টি বি‌লে জলাবদ্ধতায় বছ‌রের পর বছর ফসলহানি ঘট‌ছে। এদি‌কে, স্লুইস‌গেট‌টি নির্মা‌ণের ২ বছরের মধ্যেই অকে‌জো হ‌ওয়ায় কা‌জের মান নি‌য়ে নানা প্রশ্ন উঠ‌লেও আম‌লে নেয়‌নি কর্তৃপক্ষ।

সরজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বো‌র্ড, খুলনা-২ বিভা‌গের আওতা‌ধীন ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারের ৩/বি ওড়াতলা স্লইসগেটটি বন্ধ র‌য়ে‌ছে। সাম‌নে মা‌টি দি‌য়ে ভরাট ক‌রে রাখা হ‌য়ে‌ছে। কয়রার দক্ষিণ মদিনাবাদ, গোবরা, পূর্বচক, ২ নং কয়রা, নলপাড়া, ঘাটাখালী, হরিণখোলা ও গাগড়ামারী বিলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ ওড়াতলা স্লুইস‌গেট। ত‌বে গেটটি প্রায় ১০ বছর যাবত অকে‌জো অবস্থায় পড়ে র‌য়ে‌ছে। গেট সংলগ্ন ওড়াতলা খালটিও প্রায় ভরাট হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালে স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হয়। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করায় নির্মা‌ণের ক‌য়েকমাসের ম‌ধ্যেই নড়ব‌ড়ে হ‌য়ে প‌ড়ে। মাত্র দুই বছর পা‌নি নিষ্কাশ‌নে ব‌্যবহার করা সম্ভব হয়। দুর্বল হ‌য়ে পড়ায় ওই দুই বছরও ঠিকমত পা‌নি সরা‌নো যেত না। সেখান থেকে প্রায় ১০ বছর জলাবদ্ধতায় পাঁচ সহাস্রা‌ধিক বিঘা জ‌মির ফসলহা‌নি হ‌চ্ছে।কৃষকরা সময় মত ফসল ফলাতে পারে না। প্রতি বছর ফসল রোপনের পরে পানিতে ডুবে ফসল হানি ঘটে। প্রতিবছর আমন মৌসু‌মে দুই থে‌কে তিনবার বীজতলা তৈরি ক‌রে ফসল রোপন কর‌তে হয়। একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পা‌চ্ছে, অন্যদিকে সন্তোষজনক ফসল উৎপাদন হ‌চ্ছে না।

স্থানীয় চাষী জিয়াউর রহমান ঢালী, হা‌ফিজুর ও মেজবাহ বলেন, এই গেটের জন্য আমাদের এক ফস‌লি বি‌লে আমন ধান হয় না। আমাদের এখানকার ৬ থে‌কে ৭‌টি বিলের পানি এই গেট দি‌য়ে কপোতাক্ষ ন‌দে নাম‌তো। এখন গেট নষ্ট থাকায় ২ নং কয়রা স্লুইস গেট দিয়ে পানি নামাতে হয়। সেটাও নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। ঠিকমত পা‌নি সরা‌নো যায় না। পা‌নির চা‌পে যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। জলাবদ্ধতার কার‌ণে বেশ ক‌য়েক বছর আমন ধান উৎপাদন ভা‌লো হ‌চ্ছে না। এ বছরও তিন বার বীজতলা তৈ‌রি কর‌তে হ‌য়ে‌ছে, আমন রোপন ক‌রি অ‌নেক বিল‌ম্বে। এখনও ধান ঘ‌রে তুল‌তে একমাস সময় লাগ‌বে। ধান খ‌ুব বে‌শি ভা‌লো হয়‌নি।

স্থানীয় নাগ‌রিক নেতা শেখ আফতাব উদ্দিন ব‌লেন, ২০০৩ সা‌লে পূ‌র্বের স্লুইস‌গেট নষ্ট হ‌য়ে যায়। দীর্ঘ‌দিনের প্রত‌্যাশিত গেট‌টি ২০১২-১৩ অর্থবছ‌রে নির্মাণ করা হয়। ত‌বে দুই বছর যে‌তে না যে‌তেই গেট‌টি অ‌কে‌জো হওয়ায় কৃষকরা ফের ফসল উৎপাদন নি‌য়ে দু‌শ্চিন্তায় প‌ড়ে। ঠিকাদার নির্মাণ কা‌জে ব‌্যাপক অ‌নিয়ম ক‌রে। স্কিম মোতা‌বেক নি‌র্মিত হয়‌নি। যার কার‌ণে সরকা‌রের উদ্যোগ ভ‌েস্তে যায়। সেই থে‌কে জলাবদ্ধতায় আমন চা‌ষে ব‌্যাপক বিঘ্ন ঘট‌ছে।

স্থানীয় সমাজকর্মী মোঃ হা‌ফিজুর রহমান ব‌লেন, স্লুইস‌গেট‌টি নির্মা‌ণের সময় তলার ঢালাইয়ে রড় না দি‌য়ে কাঠ দেয়। ‌এছাড়া স্কীম অনুযা‌য়ি কাজ না হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হ‌য়ে যায়। ওই সম‌য়ে বাঁধা দি‌লেও আম‌লে নেননি ঠিকাদার। স্লুইস‌গেট‌টি নির্মা‌ণে সরকা‌রের বড় অং‌কের রাজস্ব ব‌্যয় হ‌লেও অ‌নিয়‌মের কার‌ণে জনগ‌ণের উপকা‌রে আসে‌নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ পানি এই স্লুইস গেট দিয়ে উঠানামা করে। জলাবদ্ধতায় আমন উৎপাদ‌নে ব‌্যাপক ক্ষ‌তি হ‌চ্ছে। উৎপাদন খরচ না উঠায় চা‌ষিরা চাষাবা‌দের আগ্রহ হা‌রি‌য়ে ফেল‌ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গেটটি নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়া র‌য়ে‌ছে। আর পূ‌র্বের কা‌জের মান নি‌য়ে জান‌তে চাইলে ‌তি‌নি ব‌লেন, সাতক্ষীরা-২ এর আওতায় কাজ হ‌য়ে‌ছিল, এ বিষ‌য়ে আমা‌দের জানা নেই। এছাড়া বহু‌দিন আগের ঘটনা কি হ‌য়ে‌ছে জা‌নিনা ব‌লে এড়িয়ে যান তি‌নি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বো‌র্ডের খুলনার কয়রা উপ‌জেলার আমাদী উপ-‌বিভা‌গ ও খুলনা বিভাগ -২ এর দপ্ত‌রে খোঁজ নি‌য়ে বরাদ্দ ও ঠিকাদা‌র প্রতিষ্ঠা‌নের বিষ‌য়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়‌নি।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!