খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই
  ৪৯ টাকা কমে ১২ কেজি এলপিজির নতুন দাম ১ হাজার ৩৯৩ টাকা
  অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জামিন পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
লালন পালন করেন বড় বোন

জন্মের আগে এতিম হওয়া প্রতিবন্ধী আম্বিয়া পাচ্ছেন স্বপ্নের ঠিকানা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কয়রা প্রতিনিধি

জন্মের আগে পিতাকে হারিয়ে এতিম অবস্থায় পৃথিবীতে আসেন। মাকে হারান ১ বছর বয়সে। তখন ৭ বছর বয়সের বড় বোন রাশিদা খানম ও নানীর স্নেহে বেড়ে উঠতে থাকে আম্বিয়া খাতুন। আম্বিয়ার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাকে স্কুলে ভর্তি করেন বড় বোন। বড় বোন নিজে লেখাপড়া না শিখে বিয়ে না করে কষ্ট করে ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ সংগ্রহ করেন। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হন আম্বিয়া। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবে। তবে আকস্মিক মানসকি ভারসাম্য হারানোয় ভেঙ্গে গেল তাদের স্বপ্ন। তখন বসবাস করতে থাকে আমাদি ইউনিয়নে নানীর বাড়িতে। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বাক্ষাত হয় তখনকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শহীদ সাহেবের সাথে। সে সময় বড় বোন রাশেদাকে দর্জি প্রশিক্ষণ দিয়ে সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ গ্রামস্থ খাস জমিতে ছোট একটি দোকান ও তাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেন ওই উপজেলা নির্বাহী অফিসার। মানসিক প্রতিবন্ধী আম্বিয়ার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থাও হয়। এভাবে চলতে থাকে দুই বোনের সংসার। বয়সের ভারে আর শরীরের অপারগতায় এখন আর রাশেদার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না দর্জি কাজ করা। প্রায় বছর খানেক আগে বড় বোন রাশেদা বাদ দেয় দর্জি কাজ। আম্বিয়ার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকায় চলছে দু’বোনের সংসার। শিশুকালে দু’জনের পিতা মাতা মারা যাওয়ায় সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হয় তারা। পাকা ঘরে বাস করার স্বপ্ন তাদের কাছে দুরাশা ছাড়া কিছু নয়।

এমনই প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন পার করে ২ শতাংশ জমিসহ একটি নান্দনিক ঘর পাচ্ছেন খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নে বোনের সাথে বসবাসকারী মৃত দায়েম মোড়লের মেয়ে আম্বিয়া। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর আওতায় মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ায় দুই বোনই বেজায় খুশি।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় সারাদেশে  একযোগে উদ্বোধন করবেন গৃহহীনদের জন্য প্রথম দফায় বরাদ্দকৃত ৬৯ হাজার ৯০৪ টি ঘর। প্রথম দফায় আম্বিয়ার মত বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন কাটানো খুলনার কয়রা উপজেলার ৫০টি আশ্রয়হীন পরিবার পেতে যাচ্ছে স্বপ্নের আশ্রয়স্থল। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলায় জমিসহ ঘর তৈরি করে দেয়া হবে ২০৩টি গৃহহীন পরিবারকে। স্থানীয় প্রশাসনের নিবীড় তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা আশ্রয়হীন মানুষের স্বপ্নের ঠিকানা এসব ঘর নির্মাণ কাজ শেষের পথে। গৃহহীনদের স্বপ্নের পূর্ণতা পাওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

আরও জানা যায়, প্রতিটি গৃহনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সে হিসেবে ঘর নির্মাণে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। প্রতিটি গৃহে ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা থাকবে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। গুণগতমান শতভাগ বজায় রেখে দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরগুলোর নির্মাণ কার্যক্রম শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গুণগতমান বজায় রেখে গৃহহীনদের একটা মানসম্মত ও টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিয়াউর রহমান পিএএ  জানান, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। খুলনা জেলায় ৫ হাজার ৮৮টি ঘরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুলনার ঘরগুলো আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে হস্তান্তর করতে পারবো।

খুলনা গেজেট/ এন এস/  টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!