যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মা ও প্রসূতি সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা শতভাগ স্বভাবিক প্রসব নিশ্চিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গত দেড় মাসে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১৯২ শিশু স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে জন্ম গ্রহণ করেছে। এছাড়া গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৭ শিশু স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নিয়েছে। প্রসূতি মা ও শিশু সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাদের কাউকে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি ওয়ার্ডে ১৭ জন মা স্বাভাবিকভাবে তাদের সন্তান প্রসব করেন। এসময় হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স ও মিডওয়াইফ, স্বেচ্ছাসেবীরা এসব প্রসবে সহায়তা করেন। এসময়ে জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে ৯ জন মেয়ে ও ৮ জন ছেলে। এ প্রসবে মা ও শিশুর কোন সমস্যা হয়নি। তারা সবাই সুস্থ আছেন।
চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, প্রসব পূর্ববর্তী চিকিৎসার সময় স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রসূতি মায়েদের কাউন্সিলিং করানো এবং হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকাদের সমন্বয়ে টিম ওয়ার্কের ফলেই হাসাপাতালে স্বাভাবিক প্রসূতি বেড়েছে।
প্রসূতি স্বাস্থ্য সেবায় উপজেলা পর্যায়ে দেশ সেরা হাসপতালটি বরাবরই স্বাভাবিক প্রসবেও (নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি) দেশ সেরা। ২০০৪ সাল থেকে হাসপাতালটি মোট ১৩ বার প্রসূতি সেবায় উপজেলা পর্যায়ে দেশ সেরার স্বীকৃতি স্বরুপ রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৭৩ জন প্রসূতির। এরমধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে ১৭ জন প্রসূতির।
হাসপাতালটিতে সেপ্টেম্বরের ২ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে ৪১ জন প্রসূতির। হাসপতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, আগস্ট মাসে হাসপাতালটিতে নরমাল ডেলিভারি হয় ১২৩ জন এবং সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় ৮৮ জন প্রসূতির। এ হিসেবে গত আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে ১৯২টি স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে জন্ম গ্রহণ করেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ তামান্না আক্তার বলেন, আমরা প্রসূতিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের প্রসবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার কারণেই হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসূতির সংখ্যা বেড়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আল এমরান বলেন, আমাদের মিডওয়াইফরা হাসপাতালে কোনো প্রসূতি এলে তাদেরকে শারিরিক পরীক্ষার পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলেন। তাদেরকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য উৎসাহিত করেন। এজন্য হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উপজেলা থেকে সিজারিয়ান ডেলিভারি উঠে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, গত কিছুদিন যাবৎ দেখছিলাম হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের পরিমাণ কিছুটা কমে যাচ্ছিলো। বিষয়টি নিয়ে আমার চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে মিটিং করে এ বিষয়ে প্রসূতিদের কাউন্সিলিং করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের এএনসি কর্ণারে (প্রসব পূর্ববর্তী সেবাকেন্দ্র) হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সকল প্রসূতির মোবাইল নম্বর রাখা হয়। প্রসবের দিনের ২৪ ঘণ্টা আগে তারা হাসপাতালে না এলে তাদের ফোন করে হাসপাতালে আনা হয়। মূলত আমাদের টিম ওয়ার্কের ফসল ৪৮ ঘণ্টায় এই ১৭ শিশুর স্বাভাবিক প্রসব।
তিনি আরও বলেন, সকল শিশু এবং প্রসূতিরা সুস্থ আছেন। তারা অনেকেই সুস্থ্য শরীরে নিজেদের বাড়িতে চলে গেছেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ