যশোরের চৌগাছার কৃষকরা শীতের সবজি বাধাকপি গরমে চাষ করে ব্যাপক লাভের আশা করছেন। বেশ কিছু জমি হতে কপি উঠা শুরু করেছে, আর দুই সপ্তাহ পর অধিকাংশ ক্ষেতের কপি বিক্রির উপযোগী হবে বলে জানান কৃষক। বর্তমান বাজার দরে কৃষক খুশি, তবে দুই সপ্তাহ পর বাজার দর কেমন থাকে তা নিয়ে রয়েছে শংকা।
এ জনপদের কৃষকরা প্রতি বছর নতুন নতুন উদ্ভাবনে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন। এক দশক আগেও চাষিরা বছরে সর্বোচ্চ দুইটি ফসল উৎপাদন করতেন। এখন সেখানে তিনটি কখনও কখনও চারটি ফসলও উৎপাদন করছেন। এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে কৃষকের নিরালস পরিশ্রম ও সুচিন্তিত ভাবনা হতে। তবে কৃষি উপকরনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে হতাশ চাষিরা। যে ভাবে কৃষি উপকরনের দাম বেড়েছে সে ভাবে দাম বাড়েনি কৃষকের উৎপাদিত ফসলের।
নতুন যে কোন ফসল প্রথম দিকে বাজারে আশানুরুপ দাম থাকলেও ব্যাপক ভাবে বাজারজাত শুরু হলে দাম কমতে থাকে। কমতে কমতে এমন এক পর্যায়ে এসে থামে তখন কৃষকের উৎপাদন ব্যয় উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাই কৃষকের উৎপাদিত প্রতিটি পন্যের যাতে নায্যমুল্য পাওয়া যায় তার সুব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী মনে করছেন ভুক্তভোগী চাষিরা।
শনিবার দুপুরে উপজেলার আন্দারকোটা গ্রামের মাঠে যেয়ে দেখা যায় কপি চাষিরা ক্ষেত পরিচর্জা করছেন। এ সময় কথা হয় আন্দারকোটা গ্রামের মৃত মশলেম মন্ডলের ছেলে কৃষক মতিয়ার রহমানের সাথে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ১ বিঘা ৫ কাটা জমিতে কপির চাষ করা হয়েছে। বাধা কপি মুলত শীতের সবজি, গরমে জোর দখল করে চাষ করা হচ্ছে। তবে গরমেও বাধা কপি ভাল হয়। এ বছর অতিরিক্ত গরমের কারনে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারপরও ভাল ফলনের আশা করছি।
কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, দেড় বিঘা জমিতে সুপান সান জতের কপির চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কপিতে পাতা বাধা শুরু হয়েছে। আর দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারজাত শুরু হবে। বর্তমানে ব্যাপক পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে মাজরা পোকার কারনে কপি সতেজ রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। প্রতিটি কৃষি উপকরনের দামের কাছে কৃষক অনেকটাই অসহায়, তাই কৃষি উপকরনের দাম কমানো জরুরী। ওই মাঠে কৃষক মিনহাজুল ইসলাম ১ বিঘা, আব্দুস সালাম দেড় বিঘা, মিঠু ১০ কাটা, সোহেল রানা ১০ কাটা, মুসা খা ১ বিঘা, ঝন্টু ১৫ কাটাসহ অনেক চাষিই বাধাকপির চাষ করেছেন। ১ বিঘা জমিতে ৭ হাজার কপির চারা লাগানো হয়। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত কৃষককে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বাজারদর ভালো হলে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কপি বিক্রি হয়। বাধাকপি শীতের সবজি সেটি গরমে চাষ করা হচ্ছে, সে কারনে কৃষককে বাড়তি শ্রম দিতে হয়। যত পরিশ্রমই হোক না কেন ভালো দাম পেলে কোন কষ্টই থাকেনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে বরাবরই পারদর্শী। গ্রীস্মের বাধাকপি চাষে কৃষক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সব ধরনের চাষাবাদে কৃষি অফিস সর্বদা কৃষকের সহযোগীতা অব্যহত রেখেছেন।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল